বিয়ের নামে সুন্দরী নারীদের প্রতারণা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:১০ পিএম, ২২ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৮ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (বাঁয়ে), তামান্না আক্তার (ডানে)।। ফাইল ছবি
সুন্দরীদের রূপ লাবণ্যে মুগ্ধ সবাই, তবে বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন কেউ কোনও ভয়ঙ্কর সুন্দরীর ফাঁদে পড়ে যান! যে অসাধু সুন্দরীদের চেহারায় থাকে আভিজাত্যের ছাপ। প্রায়ই ব্যবহার করেন বিলাসবহুল গাড়ি। এই সুন্দরী চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন বহু পুরুষ। তবুও কখনো কখনো একতরফা দোষ ভুক্তভোগী পুরুষের ঘাড়েই চেপে বসে। তবে সম্প্রতি কতিপয় খারাপ চরিত্রের সুন্দরীদের অপরাধের বিষয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
ঘটনা-১
চেহারা দেখে মনে হয়, তিনি বিদেশে থাকেন। নিজের এই সুদর্শন চেহারাকে পুঁজি করেই বারবার পাত্র খোঁজেন। ‘প্রবাসী পাত্রীর জন্য পাত্র চাই’। এই শিরোনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন, ৩৭ বছর বয়সী, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই।’ যোগাযোগের জন্য বারিধারা, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকার ঠিকানা উল্লেখ করেন।
কখনো তিনি কানাডার সিটিজেন। কখনো আমেরিকার। নানা পরিচয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করেন পাত্রদের। বিয়ে করে উন্নত দেশের বাসিন্দা হতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন পাত্ররা। সকল পাত্রকেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। বিদেশের মাটিতে তার বিপুল অর্থ সম্পদের প্রলোভন দেখান। জানান, ব্যবসাও রয়েছে তার। মূলত পাত্রীর বেশে এই নারী একজন প্রতারক। তার নাম সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। তার রয়েছে একটি চক্র। চক্রটির মূল হোতা এই সাদিয়া জান্নাত। অন্যতম সহযোগী তার স্বামী এনামুল হাসান জিহাদ। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাদিয়া জান্নাতকে বনানী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তার স্বামী জিহাদকে পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ী যেভাবে সুন্দরী সাদিয়ার ফাঁদে পা দেন:
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই আকৃষ্ট হন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে প্রতারণা করে পাত্রের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র। একপর্যায়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কুমিল্লার দেবিদ্বারের মেয়ে সাদিয়া জান্নাতের প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী নাজির হোসেন। নাজির হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল ফোনে জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাজির। জান্নাতের সঙ্গে বিয়ের আলাপ-আলোচনা হয়। শিগগিরই বিয়ে করে নাজিরকে কানাডা নিয়ে যাবেন বলে জানান সাদিয়া জান্নাত। গত ১২ই জুলাই গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন তারা। প্রাথমিকভাবে ১৫ লাখ টাকা ও নিজের পাসপোর্ট দেন জান্নাতের কাছে। পরবর্তীতে সাদিয়া জান্নাত জানায় কানাডায় তার ২শ’ কোটি টাকার ব্যবসা আছে। কিন্তু কানাডায় অনেক শীত, নাজির সেখানে থাকতে পারবেন না। তাই টাকাগুলো বাংলাদেশে এনে নাজিরকে দিতে চান। দেশে ব্যবসা করে দু’জনে সুখে থাকবেন। এই প্রলোভন দিয়ে ভিক্টিমের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিএইচএল বিল ইত্যাদির খরচের কথা বলে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।তারপর ফোনসহ সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ঠিকানাও পরিবর্তন করে। নাজিরের মতো অনেকের কাছ থেকে এই চক্র ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে সিআইডি।
এসএসসি’র গণ্ডি পার হয়নি:
কুমিল্লা দেবিদ্বারের মেয়ে জান্নাত এসএসসি’র গণ্ডি পার হয়নি। তবে পোশাক এবং কথাবার্তায় স্মার্টনেসের কারণে আমেরিকা, কানাডা প্রবাসী বলে লোকজনের বিশ্বাস অর্জন করতে সমর্থ হয়। প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে এই প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। প্রায় ১০ বছর যাবৎ প্রতারণা চালিয়ে আসছিলো সাদিয়া জান্নাত। প্রতারণা করে অল্প দিনেই ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে প্রায় ২০ কোটি টাকার জমি কিনেছে এই চক্র।
সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জিসান আরটিভি নিউজকে জানান, জান্নাতের নিজ হাতে লেখা ২০১৫ ও ২০১৬ সালের হিসাবের খাতা জব্দ করেছে সিআইডি। এতে কোন পাত্রের কাছ থেকে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার তথ্য রয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় জান্নাতের কাছ থেকে ৩ জনের পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩ টি মেমোরি কার্ড, ৭ টি সিল, অসংখ্য ব্যবহৃত সিম ও হিসাবের খাতাসহ গত ২রা সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়ায় ৪৮ লাখ টাকা জমা দেয়ার স্লিপ জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সাদিয়া জান্নাতের স্বামী এনামুল হাসান জিহাদ। তাদের বাড়ি বরিশালের মুলাদির বাহাদুরপুর গ্রামে। ঢাকায় রামপুরার বনশ্রীর ৩ নম্বর ব্লকের দুই নম্বর সড়কের ১৭/২০ নম্বর বাড়িতে থাকতো।
একদিনেই ৪০ লাখ টাকা:
সিআইডি জানায় দ্বিতীয় স্বামীর নেতৃত্বে ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। একদিনেই এই নারী পাত্রদের কাছ থেকে ৪০ লাখের বেশি টাকা তুলেছে। তবে কেউ জানতো না কারও তথ্য। শতাধিক পাত্র তার শিকার হয়েছে।
যেভাবে বিয়ের বিজ্ঞাপন দিতো সাদিয়া:
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে সাদিয়া প্রতারণার নানা কলাকৌশল বলতে শুরু করেছে। কখনও অবিবাহিত যুবক, কখনও বিপত্নীক, কখনও তালাকপ্রাপ্ত, কখনও নামাজি আবার কখনও বয়স্ক পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতো সাদিয়া। যে পাত্রের জন্য যেমন পাত্রী দরকার তেমন রূপেই নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করতো। বিশেষ করে ধনাঢ্য পাত্রদের টার্গেট করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দিয়েই বেশি প্রতারণা করতো। এভাবে গত প্রায় ১০ বছর ধরে শতাধিক পাত্রের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাদিয়া।
গোপন ডায়েরিতে পাত্রদের তালিকা ও টাকার অঙ্ক:
মনে রাখার সুবিধার্থে ফাঁদে পা দেওয়া পাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিতে ডায়েরি ব্যবহার করতো সাদিয়া। কে কখন কত টাকা দিয়েছে সব লিখে রাখতো। এরপর পাত্রদের পাসপোর্টসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নিতো সে। যা তার বাসা থেকেই উদ্ধার করেছে সিআইডি।
সাদিয়া খুবই ধূর্ত, টার্গেট তার নগদ টাকায়:
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, সাদিয়া জান্নাত খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। দ্বিতীয় স্বামীর অবস্থানের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে ধরা সম্ভব হয়। দৈনিক পত্রিকায় একাধিক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতো এই চক্রের সদস্যরা। সেখানে থাকতো যোগাযোগের একাধিক মোবাইল নম্বর। প্রকাশ হওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী যিনি যোগাযোগ করতেন তার সঙ্গে কথা বলে তার ইচ্ছে জেনে সেই অনুযায়ী প্রতারণার কৌশল ঠিক করতো। এভাবে গত ১০ বছরে শত শত পাত্রের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।সাদিয়াকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, ওইদিনই সে ৪টি ব্যাংকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার এফডিআর করেছে। এছাড়া টার্গেট করা পাত্রদের কাছ থেকে সবসময়ই নগদ টাকা নিতো। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা গ্রহণ করতো না।
১ সিম ১ পাত্র:
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণার বিষয়ে খুবই কৌশলী সাদিয়া। সে একেকজন পাত্রের সঙ্গে কথা বলার জন্য আলাদা আলাদা সিম ব্যবহার করতো। যে নম্বর দিয়ে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতো, সেই নম্বর দিয়ে অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতো না। টার্গেট করা পাত্রের সঙ্গে কথা বলা ও প্রতারণা শেষ হওয়ার পর ওই সিম কার্ড ফেলে দিতো। কখনও কখনও মোবাইল ফোন সেটও ফেলে দিতো।
সাদিয়া জান্নাতের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার বলেন, গ্রেপ্তারের পর সাদিয়া জান্নাতকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। যা ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত ঘটনা অনুসন্ধান ও তদন্তে কাজে লাগবে।
ঘটনা-২
আরেক সুন্দরীর নাম তামান্না আক্তার। বয়স ২৭ এর কোঠায়। ১১ বছর আগে জামালপুরের ফারুক হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১০ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। তারপরও তামান্না অবিবাহিতা, সম্ভ্রান্ত পরিবারের পাত্রী সেজে এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তির কাছ থেকে বিয়ে করে বিদেশ নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। তার এই প্রতারণার কথা জানতেন না স্বামী ফারুক এবং তার একমাত্র ছেলে।
টার্গেটে উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী:
এই সুন্দরী তামান্না সর্বশেষ একজন সরকারি উচ্চপদস্থ চাকরিজীবীর সঙ্গে প্রতারণা করে ৭ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কাছে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিআইডি ভুয়া পাত্র দেখার ফাঁদ পেতে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তামান্না:
সিআইডি সূত্র জানায়, তামান্নার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। যদিও প্রথমে সে তার বাড়ি সম্পর্কে ভুল ঠিকানা হিসেবে কিশোরগঞ্জ জানায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার স্বামী রাজধানীর একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্বামী এবং ছেলেকে নিয়ে রামপুরা ব্লক-ই ভাড়া বাসায় থাকেন।
স্বামীর চোখে ফাঁকি:
অর্থের লোভে স্বামীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তামান্না প্রায় এক বছর আগে চক্রের মূল হোতা সাদিয়া জান্নাতের সঙ্গে অপকর্মে যোগ দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তামান্নাও সাদিয়া জান্নাতের মতো খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। ১ বছর আগে পার্কে হাঁটতে গিয়ে সাদিয়া জান্নাতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তারা নিজেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে এক সময় সাদিয়ার চক্রে যোগ দেয় তামান্না।
ফাঁদে পা দেওয়া পাত্রের চাহিদা মেটাতেন:
সূত্র জানায়, পাত্রের চাহিদা অনুযায়ী তামান্না নিজেকে ওই মোতাবেক উপস্থাপন করতেন। প্রায় ৬ মাস আগে একজন সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। এরপর তারা প্রায়ই রেস্টুরেন্টে দেখা করতেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলতো তাদের ফোনালাপ। পরবর্তীতে ইউরোপে নেয়ার কথা বলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তামান্না। চক্রের মূল হোতা সাদিয়া সর্বপ্রথম ওই পাত্রের কাছে নিজেকে পাত্রী হিসেবে উপস্থাপন করেন। সাদিয়ার চলন-বলন অতিরিক্ত আধুনিক হওয়ায় প্রতারণার শিকার ব্যক্তি তাকে অপছন্দ করেন। পরবর্তীতে সে কি ধরনের পাত্রী চায় জানতে পেরে তামান্না নিজেকে ওই ব্যক্তির সামনে চাহিদা মোতাবেক উপস্থিত হতেন।
উল্টো ফাঁদে রেস্টুরেন্টে ধরা:
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর চক্রের মূল হোতা সাদিয়া জান্নাত ও তার স্বামী এনামুল হাসানকে গ্রেপ্তারের খবরটি গণমাধ্যমে দেখতে পেয়ে সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তি তামান্নার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। তারা মূলত পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিয়ে করে বিদেশ নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি সিআইডির একটি টিম এক ব্যক্তিকে মিথ্যা পাত্র সাজিয়ে তামান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় সে একইভাবে পাত্রের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে পাত্রের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের এসএসপি (বিশেষ পুলিশ সুপার) শামসুন্নাহার আরটিভি নিউজকে বলেন, ভূক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারণার বিষয়টি তামান্না স্বীকার করেছিলো। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়।
বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণায় যে শাস্তি রয়েছে:
দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা থেকে ৪৯৬ ধারা পর্যন্ত বিয়ে-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির বিধান আছে, যার অধিকাংশ অপরাধই জামিন অযোগ্য।
৪৯৪ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি ৭বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
৪৯৫ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা আগের বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
এছাড়াও ৪৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনসম্মত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত প্রতারণামূলক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন করেন, তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনের আশ্রয় যেভাবে এবং যেখানে নেওয়া যাবে:
বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অভিযোগ থানা বা আদালতে গিয়ে চাওয়া যাবে। থানায় এজাহার হিসেবে মামলা দায়ের করতে হবে। যদি মামলা না নিতে চায় তাহলে সরাসরি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে সরাসরি মামলা দায়ের করা যাবে। কেউ কেউ থানায় না গিয়ে সরাসরি আদালতে মামলা করে থাকেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। আদালতে মামলা করার সময় যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগের স্পষ্ট বর্ণনা দিতে হবে এবং সাক্ষীদের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে। আদালত অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যেকোনো আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় অভিযোগ আমলে না নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। কেউ যদি স্বামী বা স্ত্রীর পরিচয়ে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে অথচ আদৌ কোনো বিয়ে সম্পন্ন হয়নি তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করার সুযোগ আছে এবং এ মামলা থানায় করতে হবে। এ ছাড়া ভুয়া কাবিননামা তৈরি করলে জালিয়াতির অভিযোগও আনা যাবে।
উৎসঃ আরটিভি