৪০ শতাংশই অবৈধ মোবাইল ফোনের দখলে দেশের বাজার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জুন,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:১২ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
.চাহিদার শতভাগ মোবাইল ফোন দেশেই উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু অবৈধ মোবাইল ফোনের কারণে দেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোন বাজারের ৪০ শতাংশই অবৈধ হ্যান্ডসেটের দখলে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও ডলারের দাম বৃদ্ধি ফোনের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে ফোনের বিক্রি। গত বছর মোবাইল ফোন বিক্রি কমেছে ৩৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের মোবাইল ফোন খাতের অবস্থা শোচনীয়। অনেক কারখানা বন্ধের উপক্রম। সংকটে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড।
সরকার ঘোষিত বিপুল কর সুবিধার ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে দেশে দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন বাড়তে থাকে। এখন দেশে মোবাইল কারখানা ১৭টি। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বলেন, চাহিদার প্রায় শতভাগ ফোনই এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু অবৈধভাবে ফোন আমদানি বন্ধ না হওয়ায় বাজারের ৩৫-৪০ শতাংশ এখন চোরাই ফোনের দখলে।
করের বোঝা
২০২০ সালের আগে মোবাইল ফোন আমদানিতে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর ছিল। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ওপর কর ছিল ২০-২৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে এই কর ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের উৎপাদন পর্যায়ে আরও ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি অন্তত দুটি যন্ত্রাংশ দিয়ে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর আমদানি করা যন্ত্রাংশ দিয়ে সংযোজিত হ্যান্ডসেটের ওপর ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এমআইওবির সহসভাপতি রেজোয়ানুল হক বলেছেন, ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ালে প্রতিটি সেটের দাম ১ হাজার টাকা বাড়তে পারে।
কমছে উৎপাদন
বর্তমানে দেশে স্মার্ট ফোন তৈরির সক্ষমতা প্রতি মাসে ১৫ লাখ । ফিচার ফোন প্রতিমাসে ২৫ লাখ উৎপাদন সম্ভব। বৈধ ফোনের বাজার কমতে থাকায় দেশে ফোন উৎপাদন কমছে। গত বছর ৩৩ শতাংশ উৎপাদন কমেছে।
এমআইওবির সভাপতি বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিক্রি হওয়ার কারণে দামের প্রতিযোগিতায় অবৈধ ফোনগুলোর সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদকরা।
অবৈধ ফোনে বাজার সয়লাব
প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি) নম্বর থাকে। কিন্তু মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম জানিয়েছেন, তারা একটি আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন দিয়েই দেড় লাখের বেশি মোবাইল ফোনের খোঁজ পেয়েছেন। অর্থাৎ এসব ফোনই নকল। দেশের রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেদার অবৈধ মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েও কপি ফোন বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরায় স্যামসাংয়ের শোরুমে দেশি উৎপাদতি যে ফোন সেটের দাম ২৩ হাজার টাকা, পাশের দোকানে একই মডেলের সেট বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকায়।
এনইআইআর পদ্ধতি চালু
দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহার কমাতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০২১ সালে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতি চালু করে। এই সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ সেট বন্ধ হয়। এই পদ্ধতি চালুর পর দেশে অবৈধ মোবাইল সেটের বাজার ১০-১৫ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু সে বছরই অজ্ঞাত কারণে এ পদ্ধতি শিথিল করা হয়। ফলে দেশে অবৈধ সেটের ব্যবহার আরও বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে বৈধ মোবাইল ফোনের ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ডেটাবেজে ঢুকে অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নোওয়ার সুযোগ তৈরি করা হবে।