সরকারি প্রাথমিকে ছয় শিক্ষার্থী পড়িয়ে বেতন তুলছেন পাঁচ শিক্ষক!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ভরপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ ভরপাশা গ্রামের ২৬৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সব শ্রেণিকক্ষ মিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে মাত্র ছয় জন। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচ জন।
তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য পাঁচ জন শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে থাকার কথা থাকলেও দেখা গেছে উপস্থিত রয়েছেন তিন শিক্ষক। বাকি দুই শিক্ষক অনুপস্থিত দেখা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। প্রধান শিক্ষিকা মাকসুদা পারভীনের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য হতে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষিকার ভাতিজা রাসেল তিনি ঢাকাতে চাকরি করেন। বিদ্যালয়টি এখন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়টি চালিয়ে রাখার জন্য শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে ৫০ জন। শুধুমাত্র কাগজ কলমে ৫০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন ৫-৭ জন শিক্ষার্থী এখন স্কুলে আসে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণির বানানও করতে পারছে না ইংরেজিতে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ভালো করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা আরো বলেন, শিক্ষকরা বলে, শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাব, না থাকলেও পাব। এমন পরিস্থিতিতে এই এলাকার শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
২৪ জুলাই সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান কক্ষে এক জন শিক্ষার্থী দেখা যায়। তিনিও বইয়ের ব্যাগের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান কক্ষে গেলে দেখা যায় পাঁচ জন শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে হইচই করে খেলাধুলা করছে। মাঝখানে কক্ষটিতে দেখা যায় প্রধান শিক্ষিকা সহ সহকারি শিক্ষিকরা মিলে লাইব্রেরীতে বসে গল্প করছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়টিতে ঠিক মতো লেখাপড়া হয় না। এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদে ছুটি দিয়ে দেয়। পাঁচজন শিক্ষক ঠিকই রয়েছে তবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কোন উন্নতি হচ্ছে না।
প্রধান শিক্ষিকা মাকসুদা পারভীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আপনাদের এখানে কাজটা কি? জানতে চাওয়া হয় বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি কতজন।
তিনি বলেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব শিক্ষা অফিসারের, আপনাদের নয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষিকার কাছে জানতে চাওয়া হয় বিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খাতা দেখতে চাইলে তিনি তথ্য দিতে অপরগত প্রকাশ করেন।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের রুটিন মেইনটেন্যান্স ৪০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ ও স্লিপ বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা কি কাজে ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রশ্নোত্তরে বলেন, খেয়ে ফেলেছি সব।
দক্ষিণ ভরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঢাকায় বসবাসরত রাসেল তালুকদার মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ে কোন অনিয়ম হলে দেখার দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। সাংবাদিকদের বিদ্যালয়ে কাজ কি!
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। শিক্ষক থাকার কথা পাঁচ জন। কেন কি কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।