স্বপ্নের লন্ডনে মহামারিতে স্বপ্ন ভঙ্গের দহনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ৭ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্বপ্নের লন্ডনে পা রেখেই স্বপ্ন ভঙ্গের দহনে হতাশায় দিন কাটছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম তো দুরের কথা, ক্যাম্পাসেও পা রাখতে পারছেন না দেশ থেকে আসা নতুন শিক্ষার্থীরা। অনলাইনের ক্লাসে তাল মেলাতে পারছেন না অনেকেই। তবু গুনতে হচ্ছে টিউশন ফির লাখ লাখ টাকা।
ব্রিটেনের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ সাল থেকে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ব্রিটেনে অধ্যয়নে এসেছেন। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্ভূত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫ জন। ২০২০ সালের ‘টিয়ার ফোর স্টুডেন্ট’ ভিসায় কিছু পরিবর্তন আনার পর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ব্রিটেন গমন বেড়েছে। করোনাকালেও বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছেন।
ব্রিটেনের আইন অনুসারে, সপ্তাহে কলেজ পর্যায়ে দশ ঘণ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি রয়েছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। কিন্তু দেশটিতে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকই কাজ হারিয়ে বেকার। মোট বেকারের সংখ্যা ১৫ লক্ষাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটি গত ১১ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থনীতির সব সূচকও নিম্নগামী।
শেখ সামাদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ব্রিটেনে কাজের আবেদন করতে হলে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স নম্বরের (এনআই) দরকার হয়। তিনি এনআইয়ের জন্য তিন মাস আগে আবেদন করলেও এখনও পাননি। আমাদের স্বপ্নের লন্ডনের সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক আকাশ-পাতাল।
ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের ট্রেজারার সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরাও এক যুগ আগে ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেঠি। তখন একজন ছাত্র রেস্তোরাঁয় থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করে মোটামুটি বাঁচতে পেরেছে। এখন করোনায় তো রেস্তোরাঁই বন্ধ। কাজের জন্য এদেশে স্থায়ী হওয়া মানুষজনই হাহাকার করছেন। সেখানে অদক্ষ, সদ্য দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তো আরও বেশি কষ্টে আছেন।
সাইদুল আরও বলেন, এখন যারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্ধারিত টিউশন ফি দিয়ে আসলেও করোনার কারণে সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ কিংবা একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেন না। পাবলিক লাইব্রেরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব লাইব্রেরি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
মৌলভীবাজার জেলার তরুণ সাংবাদিক মেহেদী হাসান মারুফ জানান, আমি ১৭ ফেব্রুয়ারি লেখাপড়ার জন্য ইউকেতে পাড়ি জমাই। প্রথমে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি সেটি ভাষাজনিত সমস্যা। যদিও আমার আইইএলটিএসে স্পিকিংয়ে ভালো স্কোর আছে তবুও তাদের কথা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে কাজ খুঁজে পাওয়া প্রায় সোনার হরিণ হয়ে গেছে।
ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসায় কয়েক বছর আগে আসেন শফিক চৌধুরী। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার মতো কিছু দেশ ছাড়া এখন আর সরাসরি ফ্লাইটে জীবন-জীবিকার জন্য যাওয়ার সুযোগ নেই। ট্রলারে সাগর পার হওয়ার চেয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে আসাকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ মনে করছেন। আগে সীমান্ত পার হয়ে ব্রিটেন থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়া যেত, এখানেও কাজ-কর্ম ছিল।