avertisements 2

হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় বিএনপি নেতা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৭ এএম, ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম খান।

মঙ্গলবারের এই ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বাইছে।

বুধবার আলী আজমের গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় থমথমে ভাব। বাড়িতে দেখা হয় তার স্ত্রী ও ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ছোট্ট ছেলের সঙ্গে।

তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান জানান, একটি রাজনৈতিক মামলায় তার ভাইকে ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।

এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল ভাই যেন তার নামাজে জানাজা পড়ান। এ কারণেই প্যারোলে মুক্তি চাওয়া হয়।

মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ভাই জানাজা পড়ান। কিন্তু হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি অবস্থায় ছিলেন তিনি। অনুরোধ করেও হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খোলানো যায়নি।

তিন ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেলেও তিনি মাত্র এক ঘণ্টার মতো ছিলেন। দাফনের পরই পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। 

আলী আজমের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার লিপি বলেন, জামিনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু জামিন হয়নি। পরে আবেদন করে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় আসেন।

ডান্ডাবেড়ি খোলার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। 

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয় জানাজার সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি।

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের ভাইস চেয়ারম্যান বোয়ালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আ ন ম খলিলুর রহমান ইব্রাহিম বলেন, আলী আজম খান আমার এলাকার একজন সৎ ব্যক্তি।

শুধু রাজনীতি করার কারণে অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি নয়। বিষয়টি অমানবিক। 

জানতে চাইলে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, প্যারোলে মুক্তিরপর বিএনপি নেতা আলী আজমকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। ডান্ডাবেড়ির বিষয় আমাদের নয়। আমরা শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘উচ্চ পর্যাযের নির্দেশনা এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয়েছিল।’

জানা যায়, আলী আজমের বৃদ্ধ মা রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান। সংবাদ পেয়ে শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও জানাজা পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে প্যারোলে মুক্তি চান তিনি।

আদালত তাকে মঙ্গলবার তিন ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন। এরপর আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে পাবুরিয়াচালা এলাকায় নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। ওই অবস্থায়ই তিনি মায়ের জানাজা পড়ান। 

অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি-আসক : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আলী আজম নামে এক বিএনপি নেতার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়ানোর ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

বুধবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।

সংবিধানে এমন বিস্তৃত অধিকার থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ নাগরিককে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয়, বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি। 

বিবৃতিতে বলা হয়, পাশাপাশি এক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া আলী আজম কোনো সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি নন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

বরং তিনি একটি গায়েবি রাজনৈতিক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে যেই মামলাটি রয়েছে সেই মামলার বাদী এই ঘটনা ও মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে মতামত ব্যক্ত করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ধরনের নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অসংবেদনশীল আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2