১২ বছর ধরে দুলাল মিয়ার শিকলবন্দী জীবন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ এপ্রিল,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রায় এক যুগ ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটছে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার দুলাল মিয়ার (৩০)। শিকল খুলে দিলে অন্যের ক্ষতি করে তাই মানসিক ভারসাম্যহীন দুলাল মিয়াকে ছোট একটি জরাজীর্ণ ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে তার চিকিৎসাও হচ্ছে না। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই তাকে শিকলের মধ্যে আটকে থাকতে হচ্ছে।
দুলালের মা ডলি বেগম জানান, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। আমরা সকলেই ভালো ছিলাম। এরই মধ্যে ২০০৭ সালে আমার স্বামী ভুলু মিয়া মারা যান। এরপর থেকেই আমার একমাত্র ছেলে দুলাল ছন্নছাড়া হয়ে যায়। পরের বছর থেকেই ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে আমার আর আর্থিক সামর্থ নেই তাকে চিকিৎসা করানোর।
তিনি আরো বলেন, আশা ছিল ছেলেকে পড়াশোনা করাব। ছেলেটাও মেধাবী ছিল। অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। কিন্তু কোনো এক ঝড়ে যেন আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমার স্বামীও চলে গেলেন। ছেলেটিও পাগল হয়ে গেলো। তাকে বেঁধে না রাখলে মানুষের ক্ষতি করে। মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে মারধর করে। প্রথম দিকে তাকে বেঁধে রাখতাম না। কিন্তু এখন আর পারি না।
ডলি বেগম বলেন, মানুষ বিভিন্ন কথা বলে। আমার চোখের সামনে ছেলেটিকে শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে। মা হয়ে আমি এটা সহ্য করতে পারি না। কিন্তু কি করবো? আমার তো কোনো উপায় নেই। টাকা পয়সাও নেই যে চিকিৎসা করাবো। ছেলেটির জন্য বড় মেয়ে রাখিকে বিয়ে দিতে পারছি না। মেয়েটি তার ভাইয়ের কথা চিন্তা করে বিয়ে করছে না। বিয়ে করলে আমরা অসহায় হয়ে যাবো। এই জন্য মেয়েটা বিয়ে করছে না। কিন্তু তারও একটি জীবন রয়েছে।
প্রতিবেশী শাকিলা বেগম বলেন, ছেলেটি ভালো ছিল। পড়ালেখাতেও ভালো ছিল। কিন্তু তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই যেন সব উল্টা পাল্টা হয়ে গেছে। সারাদিন তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। ডাক্তাররা বলেছিল, চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু চিকিৎসা করার মতো তো তাদের সামর্থ্য নেই। সমাজের কোনো বিত্তবান ব্যক্তি এগিয়ে এলে হয়তো ছেলেটি সুস্থ জীবন ফিরে পেত।
প্রতিবেশী রুমন বলেন, ছেলেটি ছোটকালে ভালো ছিল। আমাদের চোখের সামনেই থাকতো। কিন্তু তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই যেন কি হয়ে গেলো। সারাদিন তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর মো: আফজাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা সে হিসেবে আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। যদি এ রকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমি তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। একজন মানুষকে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা খুবই দুঃখজনক বিষয়। আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব।