‘বোরকা চিনতে ভুল’, স্ত্রী ভেবে খুন করলেন আরেক নারীকে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্ত্রীকে খুন করতেই কাঁচির এক পাশের ভাঙা অংশ নিয়ে গাবতলীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী মো. সেকুল। কিন্তু বোরকা চিনতে ভুল হওয়ায় তার সেই কাঁচির আঘাতে খুন হয়েছেন এক সন্তানের জননী এক পোশাককর্মী।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের রাস্তায় সেকুলের হামলায় আহত হওয়ার পর আয়েশা সিদ্দিকা নামের ২৩ বছর বয়সী ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, নিজের স্ত্রী ভেবে আয়েশার বুকে ও পিঠে কাঁচি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন সেকুল। কিন্তু বোরখার মুখ খুলেই ভুল বুঝতে পারেন। তখন নিজেই আয়েশাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয়রা তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করে।
পেশায় ট্রাক চালক সেকুল স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন গাবতলী এলাকায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগে তাকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান তার স্ত্রী। বাসা থেকে বেশ কিছু টাকা পয়সাও নিয়ে যান। সে কারণে তাকে খুন করার ‘রোখ চেপে’ গিয়েছিল তার।
ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, কয়েক দিন খোঁজ নিয়ে সেকুল জানতে পারেন, তার স্ত্রী মোহাম্মদপুরের নবীনগরের দিকে থাকেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে ওই কাঁচির টুকরো হাতে নিয়ে নবোদয় হাউজিং কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় ওঁৎ পেতে ছিলেন তিনি।
“পরে ওই দিক দিয়ে তার স্ত্রীর মত বোরকা পড়া এক নারীকে রিকশায় করে নবোদয় বাজারের দিকে যেতে দেখে সেকুলের ধারণা হয়, এটাই তার স্ত্রী। রিকশাটি নবোদয় বাজারের আগে রাস্তার পশ্চিম মাথায় পৌঁছালে পেছন থেকে হাতের কাঁচি দিয়ে রিকশায় থাকা ওই নারীর ঘাড়ে কোপ দেন সেকুল।
“তাতে ওই নারী রিকশা থেকে পড়ে যান। সেকুল তখন তার বুকে ও পিঠে আরো কয়েকটি কোপ দেন। তারপর মুখের ওপর থেকে নেকাব সরিয়ে তিনি দেখেন এ তো তার স্ত্রী নয়।”
সেকুল পুলিশকে বলেছেন, তার স্ত্রী যে ধরনের বোরকা পরেন, আর যেভাবে পরেন, ওই নারীও ঠিক একই ধরনের বোরকা পরায় তার ‘চিনতে ভুল হয়ে গেছে’।
নবোদয় হাউজিংয়ের যেখানে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার কাছেই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নূরুল আমিনের বাসা। ফজরের নামাজ শেষে প্রাতভ্রমণ শেষ করে বাসার কাছে এসে তিনি রাস্তায় জটলা দেখে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, “সেখানে দেখি এক নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর স্থানীয় লোকজন এক লোককে ধরে রেখেছে। স্থানীয় একজন আমাকে জানাল, ওই নারীর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে তার স্বামীর সাথে সে কথাও বলেছে।”
এরই মধ্যে কয়েকজন ধরাধরি করে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলে স্থানীয়রা আটক সেই লোককে তাদের হাতে তুলে দেয় বলে জানান নুরুল আমিন।
ওই এলাকায় রাস্তার পাশে ভ্যানে করে মুদিপণ্য বিক্রি করেন আমেনা বেগম, তিনিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
আমেনা বলেন, প্রথমে তারা ভেবেছিলেন এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা। পরে জানতে পারেন ঘটনা আসলে অন্য রকম।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, আয়েশা সিদ্দিকার পরিচয় তারা জানতে পারেন তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। সেখান থেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
আয়েশার বোন খালেদা সিদ্দিকা জানান, তাদের বাড়ি দিনাজপুরের বিরলে। তার বোন ঢাকা উদ্যানের কাছে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার স্বামী মো. রুবেল বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। আদাবরে একটি ভবনের কাজ পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তাকে সেখানেই থাকতে হচ্ছে।
“স্বামীর জন্য ভোরবেলা উঠে ভাত রান্না করে ও গত কয়দিন আদাবরে গিয়ে দিয়ে আসছিল।আজ সকালে যাওয়ার সময় ওই ঘটনা…।”
রুবেল বলেন, তাকে খাবার দিয়ে আয়েশার যাওয়ার কথা ছিল কারখানায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে তাদের।