avertisements 2

ভুল মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে খুনি ধরা পড়ল

ভুল মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে খুনি ধরা পড়ল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

আবাসিক হোটেলের নিবন্ধন খাতায় নাম লেখার সময় ইচ্ছে করেই ভুল মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন খোকন ভুঁইয়া। ১১ সংখ্যার ফোন নম্বরের বদলে লিখেছিলেন প্রথম নয়টি নম্বর, তাও একটি সংখ্যা ভুল। পরে হোটেলকক্ষে এক নারীকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এরপর নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখে আত্মগোপন করে। তার ধারণা ছিল, কোনোভাবেই তাকে শনাক্ত করতে পারবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে শেষপর্যন্ত ভুল নম্বরের সূত্র ধরেই প্রযুক্তিগত তদন্তে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা সমকালকে বলেন, রাজধানীর শ্যামলী এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে গত ৮ সেপ্টেম্বর এক নারীর হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। এর ছায়াতদন্ত করছিল ডিবি। একপর্যায়ে হত্যায় জড়িত খোকনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়। সোমবার সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, খোকন এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশে ফিরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে দু'জনে বিয়ার পান করে। এরপর চলে আসে ফার্মগেট এলাকায়। রাত ২টার দিকে ফার্মগেট ফুটওভারব্রিজের ওপর আসমা ওরফে লিমা বেগম ওরফে কবিতা (২৫) নামের এক নারীর সঙ্গে তার কথা হয়। কবিতা তার সঙ্গে রাত কাটাতে সম্মত হলে দু'জনে চলে যায় শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের ৪/১ নম্বর ভবনে রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলটির ষষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর কক্ষে ওঠে। পরদিন ওই কক্ষেই খাটের সঙ্গে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় কবিতার লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় দায়ের মামলার বাদী নিহতের স্বামী সজিব আলী শেখ জানান, পেশায় তিনি পান বিক্রেতা। পরিবার নিয়ে শেওড়াপাড়ার বর্ডার বাজার এলাকায় থাকেন। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে তার স্ত্রী ফার্মগেটে আসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। সেদিন রাত ১০টাতেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দু'দিন ধরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়। 

তিনি জানতে পারেন, হোটেলে তার স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হোটেলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেন।

ডিবি সূত্র জানায়, হোটেলের নিবন্ধন খাতায় খোকনের দেওয়া অসম্পূর্ণ মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই শুরু হয় অনুসন্ধান। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট বিশ্নেষণ ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিন হাজার টাকার চুক্তিতে তার সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতে সম্মত হন কবিতা। সেখানে তারা অন্তরঙ্গ সময় কাটান। তবে পরে তিনি ২০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। টাকা না পেলে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টি বলে দেবেন বলেও হুমকি দেন। এ নিয়ে দু'জনের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন খোকন। রোববার গ্রেপ্তারের পর সোমবার তাকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই সুকান্ত বিশ্বাস। তিনি আসামির জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন জানান। পরে ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2