প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা, কখনও মুখ্য পরামর্শক সেজে প্রতারণা
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা, কখনও মুখ্য পরামর্শক সেজে প্রতারণা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৮ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির মুখ্য পরামর্শক ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পরিচয়ে কাজ ও সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন ড. এম. এম বোরহান উদ্দিন ইমরান নামের এক ব্যক্তি। যদিও তিনি কখনই পিএইচডি অর্জন করেননি। ইতোমধ্যে তিনি তার আইনজীবী স্ত্রীর সহায়তায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়েও নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
অবশেষে ভুক্তভোগীর মামলার ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি। বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) শেখ ওমর ফারুক।
শেখ ওমর ফারুক জানান, মঙ্গলবার সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের একটি দল রাজধানীর ধানমন্ডির চার নম্বর সড়কের ২৪ নম্বর বাড়ির ৫/ডি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ইমরানকে গ্রেফতার করে। ইমরান ওই ফ্ল্যাটে অবসরপ্রাপ্ত সচিব পরিচয় দিয়ে বসবাস করতেন। ইমরানের স্ত্রী আমাতুল করিম ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। প্রতারণার বিষয়ে তদন্তে তার স্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা মিললে অবশ্যই তাকেও আটক করা হবে।
অভিযুক্ত ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৫ জুলাই ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেছেন আবু সাঈদ নামের এক ভুক্তভোগী। এছাড়াও আরও কয়েকজন অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন সিআইডির কার্যালয়ে।
ভুক্তভোগী আবু সাঈদ জানান, ২০১৯ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ইমরানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা, সচিব ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় দিয়ে আমার ছেলেকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর কথা বলে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আমি তাকে ৪০ লাখ ৩১ হাজার টাকা দিই। কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হন। পরে আমার ছেলে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। আমি তার কাছে পাওনা টাকা ফেরত চাই। ওই টাকা দিতে তিনি নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন।
অপর ভুক্তভোগী মিঠুন চক্রবর্তী জানান, তিনি একটি বিদেশি বিমা কোম্পানি চাকরি করেন। তার সঙ্গে গোলাম মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিও চাকরি করতেন। ওই বিমা কোম্পানিতে গিয়ে ড. এম.এম বোরহান উদ্দিন ইমরান নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরামর্শক পরিচয় দিয়ে এক কোটি টাকার পলিসি খোলার কথা বলেন।
সেই ভুক্তভোগী বলেন, ২০১৯ সালে ইমরানের সঙ্গে আমার সহকর্মী গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনে ডাটা এন্টি অপারেটরের চাকরি দেয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। আমি তাকে নগদ এক লাখ টাকা দেই। বাকি টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মতিঝিলের বৈদেশিক শাখায়, চাঁদপুর শাখায় তার হিসাব নম্বরে টাকা জমা দেই। তিনি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা ব্যাংকে প্রভিশন অফিসার পদে চাকরি দেয়ার কথা বলেন। যখন আমি দেখলাম আমি প্রতারণার শিকার হচ্ছি, তখন আমি তার কাছে টাকা ফেরত চাই। এরপর তিনি আমাকে ধানমন্ডি স্টার হোটেলে নিয়ে সিটি ব্যাংকের একটি চেক দেন। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় সেটা বাউন্স হয়।
মিঠুন চক্রবর্তী আরও বলেন, তিনি (ইমরান) রেন্ট-এ কারের গাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্টিকার ব্যবহার করতেন। ইমরানের এসব প্রতারণার বিষয়ে তার স্ত্রী সবকিছু জানেন বলে অভিযোগ মিঠুনের।
সিআইডি কার্যালয়ে আরেক ভুক্তভোগী শাহিনের অভিযোগ, ২০১৯ সালে তাকে ড্রাগস অ্যাসেনসিয়ালে চাকরি দেয়ার কথা বলে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইমরান। পরে তিনি এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের এক নেতার কাছ থেকে সরকারি দরপত্র পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৫৪ লাখ টাকা প্রতারণা করেছেন। আরেক ভুক্তভোগীকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চাকরির কথা বলে ৫ লাখ টাকার প্রতারণা করেছেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আমরা তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপদেষ্টা এবং সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আজকে আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।