মাইকিং করেও জানাযায় লোক নেই! লকডাউনে বেপরোয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জুলাই,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শনিবার বিকাল ৫টা। সিদ্ধিরগঞ্জের মাহামুদ পুর ঈদগাহ মাঠের ঠিক মাঝখানে কাফনে মোরা বৃদ্ধ রফিকুল ইসলামের লাশ। স্টিলের খাটিয়ার উপর রাখার পাশে দাঁড়িয়ে মাইকিং করছিলেন এক ব্যক্তি।
‘সম্মানিত এলাকাবাসী, একটু পরেই রফিকুল ইসলামের জানাজা শুরু হবে আপনার ঈদগাহ মাঠে আসুন’- কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এমন আহ্বানে সাড়া মিলেনি কমপক্ষে ২০ মিনিট। অথচ এলাকায় একজন ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলামের শুভাকাঙ্ক্ষীর কোন অভাব নেই। এলাকাবাসী তো দূরে থাক, মৃত রফিকুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়াদের মাঝেও কেউ আসলেন না সেই জানাজায়।
কারণ, রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। ঠিক ২দিন পর সোমবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডের কবরস্থানে মাইকিং হচ্ছিল সালমা বেগমের (৬৫) নামাজে জানাজার। লাশ সামনে রেখে অপেক্ষা করছিলেন পরিবার ও দূর সম্পর্কের মোট ৫ জন স্বজন। কিন্তু প্রায় আধঘণ্টা মাইকিং এর পরেও জানাজায় এলেন না কেউই। কারণ সেই একই, তিনিও মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের পৃথক ২ এলাকার বাসিন্দা করোনায় মারা যাওয়া এই দুইজনের জানাজার নামাজে এলাকার কেউ উপস্থিত হননি। একজনের জানাজাতে এসেছিলেন ২ জন আর অপরজনের জানাজাতে ৫ জন।
এদিকে গত ৫ জুন রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের একজন যুবক এ সংক্রান্তে একটি ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে দেখা যায় বিশাল ঈদগাহ মাঠের মাঝে একটি কফিন। পাশে একজন লোক দাঁড়ানো আর কেউ নাই। যে ছবিটি এখন ভাইরাল।
ছবিটি অনেকের হৃদয়ে দাগ কাটলেও চলতি লকডাউনে সাধারণ মানুষের মাঝে সেই করোনা ভীতি বা সচেতনতার দেখা মিলেছে খুব সামান্যই। এমনকি যে ২টি এলাকার বাসিন্দা জানাযায় পর্যন্ত যেতে ভয় পেয়েছিলেন, সেই ২টি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে সন্ধ্যার পর লকডাউন বলতে কিছুই যেন নেই।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়া নিবাসী রফিকুল ইসলাম (৭৫) করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের ইস্ট ভিউ হসপিটাল এন্ড ল্যাবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পরিবারের আহ্বানে টিম খোরশেদের স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতাল থেকে লাশ বুঝে নেন। নেওয়া হয় এলাকাতে। সেখানে মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের ২ জন ছাড়া আর কেউ আসেনি জানাজায়।
লাশ যখন মাহমুদপুর ঈদগাহ মাঠে রাখা হয় সেখানেও লাশের আশেপাশে কেউ আসেনি। প্রায় আধাঘণ্টা পর যে বাড়ির মালিক সে বাড়ির নিচে নেওয়া হলেও ভাড়াটিয়ারাও আসেনি।
অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ ৮নং ওয়ার্ড সৈয়দ পাড়া নিবাসী সালমা বেগম (৬৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। গত সোমবার সকালে মরহুমার পরিবারের আহ্বানে মাসদাইর কবরস্থানে গোসল শেষে এলাকার ঈদগাহ মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে এলাকাতে মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের ৫ জন ছাড়া আর কেউ আসেনি।
দুইটি লাশই টিম খোরশেদের লোকজন দাফন করেন। কিন্তু দাফনের সময়ও উপস্থিত স্বজনরা ছিলেন অনেক দূরে।