ঢাকা শহর বারুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১৮ পিএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে করে ‘ঢাকা বারুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে’—এমনটাই বলছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সবদিক রক্ষা করে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে’।
‘লকডাউন’ না ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ নাকি ‘শর্তসাপেক্ষে নিয়ন্ত্রণ’? একদিকে একের পর এক সিদ্ধান্ত আরেকদিকে প্রজ্ঞাপন জারির দুদিনের মাথায় গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া— সব মিলিয়ে আসলে কী করতে চায় সরকার? মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাতে এসব বিষয়ে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
আমাদের সবার প্রতিপক্ষ এখন শুধুই করোনা
সরকারি বিধিনিষেধ মেনে করোনা মোকাবিলায় এই মুহূর্তে সবার এগিয়ে আসা উচিত মন্তব্য করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে এখন আমাদের সবার প্রতিপক্ষ হওয়া উচিৎ করোনাভাইরাস। আমরা বুঝতে পারছি না কী ভয়াবহতার মধ্যে বাস করছি। নিজে থেকেই বাইরে বের না হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। তা না করে যখনই নিয়ন্ত্রণ করতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তখনই একটি শ্রেণি বিরোধিতা করছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ মহামারি পরিস্থিতিতে আমরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ না। করোনা আমাদের সকলের প্রতিপক্ষ।’
ব্যবসায়ীরা দুদিন পর সেলস বয় বা ক্রেতা পাবেন কোথায়?
দোকান বন্ধের প্রথম দিনে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নেমে আসা এবং দোকান খুলে দিতে দাবি জানানোর সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সোমবারের বিক্ষোভে কিশোর সেলস বয়দের দেখা গেছে। তারা কেউ মাস্ক পরে ছিল না। করোনার এমন প্রকোপ চলতে থাকলে এই ব্যবসায়ীরা দুদিন পর সেলস বয় বা ক্রেতা পাবেন কোথায়? পরিস্থিতি যে ভালো না সেটা আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি না। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। ৭ দিন ঘরে থাকলে হয়তো ততটা ক্ষতি হবে না যতটা এখন বেরিয়ে আসলে হবে।’
গণপরিবহন চালু করতে হলো বাধ্য হয়ে
অনেকটা বাধ্য হয়ে গণপরিবহন চালু করতে হলো উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম বেসরকারি অফিসগুলো কর্মীদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। যত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে অফিস চালু রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। ফলে অফিসগামীদের গত দুদিনের হয়রানি দেখে গণপরিবহন খুলে দিতে হলো।’ সেক্ষেত্রে অফিস বন্ধ করে দেওয়া যেত কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে সর্বনাশ হয়ে যেত। গতবছর সাধারণ ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ গ্রামে ছুটেছে। সেবার সংক্রমণ কম ছিল ফলে বেশি ছড়ায়নি। কিন্তু এবার সংক্রমণের মাত্রা এত বেশি যে ছুটি পেয়ে মানুষ ঢাকার বাইরে গেলে করোনা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তো। এখন ঢাকা বারুদের ওপর রয়েছে, সামান্য এদিক ওদিক হলে বিপদ বাড়বে।’
গত দুদিনে বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে, মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে
গত দুদিনের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দুটি সুফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, অফিসগামীদের কিছুটা হয়রানি হলেও মানুষের বের হওয়ার প্রবণতা কমেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে আড্ডা দেওয়ার, ঘুরতে যাওয়ার জায়গা না থাকায় মানুষ বাসায় থাকছে। আর দ্বিতীয়ত মাস্ক পরা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কেবল ডাবল মাস্ক পরে বের হলে, বাইরে কোনওভাবে মাস্ক না খুললে, বাসায় ফিরে হাত ধুয়ে তারপর মাস্ক খুললে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আমি অনেক চিকিৎসক বন্ধু দেখেছি যারা হাজার হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসা করলেও কেবল এই নিয়মগুলো মেনে চলার কারণে এখনও আক্রান্ত হননি। ফলে মাস্ক কিন্তু আবশ্যক। কেউ কিন্তু বলতে পারছে না করোনা কবে শেষ হবে। ফলে এই নিয়মগুলোর সঙ্গে নিজেদের অভ্যস্ত করে ফেলতে হবে।’
মিরপুরে বেশি সংক্রমণ, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা
মাস্ক পরার অভ্যাস বাড়ানোর উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে বেশিরভাগ সংক্রমণ ও মৃত্যু ঢাকায়। মিরপুরে সংক্রমণ অনেক বেশি। সবার ভেবে দেখা উচিত আমরা নিজেরা বড় কোনও ভুল করছি কিনা। কখনও কখনও কেবল নিজের ভালো দিয়ে ভালো হয় না। সবাই মিলে যদি না ভাবি তাহলে আসলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’
এ পরিস্থিতিতে কে কী দাবি করলো সেটা না ভেবে কঠোর কোনও সিদ্ধান্ত আগামীতে আসবে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি রিভিউ করছি এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এভাবে চললে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সবার ভালোর জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও কখনও কখনও পুরো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। আগামীতে পরিস্থিতি দেখে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে।