খেটে খাওয়া মানুষের সেবা করাই সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:১৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৪২ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের খেটে খাওয়া, অসহায়, বঞ্চিত এবং গ্রামে-গঞ্জে থাকা মানুষদের সেবা করাই সরকারি কর্মচারীদের সবথেকে বড় দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এই দেশের গরিব মানুষ যারা এখনও তৃণমূলে পড়ে আছেন, তারাই এদেশের মালিক। আর তাদেরই ঘর থেকে সবাই লেখাপড়া শিখে আজকে উঠে এসেছেন। কাজেই সেই দিকে লক্ষ রেখেই তাদের সেবা করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সাতটি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু তার যে স্বপ্ন ছিল—ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার, তা তিনি করে যেতে পারেননি। কাজেই সেই কর্তব্য এখন সবার। এই দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করবেন। জনগণের সেবার জন্যই আজকে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।’
এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বলা কথাগুলো উল্লেখ করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি কোট করছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনা দেয় গরিব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়িতে চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক।’ প্রশিক্ষণ নেওয়া কর্মচারীদের এ কথাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যতটুকু আমরা যা করতে পারছি, সবকিছুর ভিত্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করে গেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রশাসন হবে এবং সেই প্রশাসনের কার্যক্রম চলবে—এটাও কিন্তু তিনি নিজেই সৃষ্টি করে গেছেন। তার হাতেই গড়া প্রতিটি ক্ষেত্র। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
সরকার প্রধান উল্লেখ করেন—বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের যে মানুষগুলো একেবারে তৃণমূলে বাস করে, যাদের পক্ষে একবেলা খাদ্য জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। তারা পেট ভরে খাবে, শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের গৃহ হবে। তারা উন্নত জীবন পাবে, তারা সুন্দর জীবন পাবে। কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘটনার পর যখন তাকে হত্যা করা হলো, তখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার যে আদর্শ, যে নীতি, যে চেতনা—তা সম্পূর্ণভাবে ভূ-লুণ্ঠিত করে স্বাধীনতাবিরোধীরা। বাঙালি জাতি হিসেবে যেন অস্তিত্ব না থাকে, সেইভাবেই যারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছিল, মূলত তারাই ক্ষমতায় এসেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে কারণে ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত, আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ কিন্তু এগুতে পারেনি। অথচ বাংলাদেশ পারে, যেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসি, তখন থেকে একটা প্রচেষ্টা ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রের সুফল যেন জনগণ পায়, স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায় এবং বাংলাদেশ সারাবিশ্বে যেন একটা মর্যাদা পায়। কারণ, যখন আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসেবে ছিলাম, মানুষের কাছে শুনতাম বা তার পরেও যখন গেছি, বাংলাদেশ শুনলেই মানুষ মনে করতো, এটা একটা ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়, দুর্ভিক্ষ এবং দরিদ্র দেশ। যে দেশ শুধু ভিক্ষার ওপরে বাঁচে। মানুষের করুণার ওপরে বাঁচে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যাকে সাহায্য চাইতে হয়। বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই জাতির একজন সদস্য হিসেবে এটা আমাদের খুব পীড়া দিতো। সেজন্য একটা লক্ষ্য ছিল যদি সরকার গঠন করতে পারি, জনগণের সেবা করাটাই হবে সবথেকে বড় লক্ষ্য। বাংলাদেশের সম্মানটা ফিরিয়ে আনবো ও বিশ্বে মাথা উঁচু করে আমরা চলবো। আজকে আমরা তার অনেকটাই করতে পেরেছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বটাকেই যেন স্থবির করে দিয়েছে। তার মাঝেও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রশাসন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক-সামাজিক সব ধরনের অবস্থানগুলো যেন অব্যাহত থাকে, আমাদের মানুষ যেন সেবা পায়, মানুষের যেন ভোগান্তি কম হয়।’ সে লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।