avertisements 2

করোনা নিয়ন্ত্রণের পথে বাংলাদেশ?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৭ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু একেবারেই কমে এসেছে। গত শনিবার একজন মৃত্যুবরণ করেন। দেশে করোনা সংক্রমণের ১৯ মাস পর এক দিনে এটিই সবচেয়ে কমসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা। পরবর্তী দু'দিন রবি ও সোমবার যথাক্রমে চার ও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই মাস ধরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে। এক সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার দেড় শতাংশের নিচে। দেশে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন কেন্দ্র পুরোদমে চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চালু হয়েছে। টিকাকরণেও গতি এসেছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি চলছে। সব মিলিয়ে গত বছরের মার্চের পর জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তবে কি করোনা নির্মূলের পথে রয়েছে বাংলাদেশ?

স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ঠিক এখনই বিদায় নিচ্ছে না। তাদের অভিমত, টানা দেড় মাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকায় করোনাভাইরাস অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো একটি রোগ হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে সংক্রমণ একেবারেই কমে আসার পর আবারও বেড়ে মহামারি রূপ নিয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। ওই ধরন ছড়িয়ে পড়লে দেশেও সংক্রমণ বাড়বে। সুতরাং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে টিকাকরণ আরও দ্রুতলয়ে অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে দ্রুততম সময়ে অধিকসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে।
করোনা কি নিয়ন্ত্রণের পথে :বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে সেটি অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো গণ্য হবে। তবে নূ্যনতম ১৪ দিন এই হার বজায় থাকতে হবে। দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক টাইমে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার চলতি বছরের জুলাইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। একই সঙ্গে দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১৫ হাজার এবং মৃত্যু আড়াইশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকে। শনাক্তের হারও কমতে শুরু করে এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এর পর থেকে টানা ৫৯ দিন ধরে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে ৩ অক্টোবর থেকে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে। গত ২২ অক্টোবর তা আরও কমে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে আসে। এরপর শনাক্তের হার কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি হলেও তা ২ শতাংশ অতিক্রম করেনি।
এক সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার দেড় শতাংশের নিচে রয়েছে। একই সঙ্গে মৃত্যুও কমে আসছে। এক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে। গত শনিবার একজন আর গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। এর আগে গত রোববার চারজন মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের পথে বলা যায়।

কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে আফ্রিকায় সংক্রমণ হার অত্যন্ত কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ভারতে সংক্রমণ হার নিম্নমুখী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ হার খুব কম। এটি আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও টিকা গ্রহণের পাশাপাশি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা অতিমারিকে নির্মূল করতে সক্ষম হবো।
আবারও মহামারির কেন্দ্রস্থল ইউরোপ :ইউরোপের ৫৩টি দেশে নতুন করে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইউরোপের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ইউরোপে কভিড-১৯ সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে গত চার সপ্তাহে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। সুতরাং ইউরোপ আবারও অতিমারির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানিতে টিকার আওতায় না আসা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে দুই ডোজ টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বুধবার ফ্রান্স সরকার উচ্চ সংক্রমিত ৩৯টি আঞ্চলিক বিভাগে স্কুলশিশুদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে। এদিকে, করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও ইতালিতে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনেও নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দিন ধরে গড়ে দৈনিক সংক্রমণ ৭০ হাজার করে থাকছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) বলেছে, শীত মৌসুমে করোনার দাপট আরও বাড়বে। দেশে দেশে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বাড়ায় বিশ্বব্যাপী ফের উদ্বেগ বাড়ছে। সুতরাং করোনা দ্রুতই বিশ্ব থেকে যে বিদায় নিচ্ছে না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও একমত পোষণ করেছেন।

সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের :দেশে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে নতুন ধরন শনাক্ত হলে তা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টে (ধরন) সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশ এর বাইরে থাকবে না। সুতরাং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যত দ্রুততম সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে, ততই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সমকালকে বলেন, করোনার ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তন হলে সংক্রমণ বাড়বে, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

সংক্রমণ শূন্যে নামবে, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর :করোনার সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নামার আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ থাকলেও সেটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। বেশ কিছুদিন ধরে মৃত্যুর হারও সিঙ্গেল ডিজিটে রয়েছে। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাকরণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2