avertisements 2

কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৯ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পাশাপাশি জনগণকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে 'ধর্ম নিয়ে কেউ যাতে বাড়াবাড়ি না করেন'- সেজন্য তিনি দেশবাসীকে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

বৈঠকে 'বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২১' এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল শেখ রাসেল দিবসের আলোচনাতেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে- সংবিধানেও সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইসলাম ধর্মও সেই কথা বলেছে। নবী করিমও (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কাজেই সেই বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে, সেটাও আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে সব মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিব জানান, সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম নিয়ে কিছু লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন।

সচিব বলেন, কেউ যদি কোরআনের অবমাননা করে, কোরআন কাউকে কোনো ক্ষমতা (অথরিটি) দেয়নি যে আমি গিয়ে তার ধর্মের কোনো কিছু ভাঙব। এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'কোরআন অবমাননার জন্য কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা ইসলামে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটা ফিতনা। আর ফিতনা হলো সবচেয়ে বড় অপরাধ। যদি কেউ কোরআনের অবমাননা করে, কোরআন আমাকে কোনো অথরিটি দেয়নি যে, আমি গিয়ে তার ধর্মের কোনো কিছু ভাঙব। সেটা ফিতনার মধ্যে পড়বে। সেটি আরও বড় অপরাধ হবে। সেটি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, কেউ আমার ধর্মকে অবমাননা করলে তার প্রতিবাদ করতে পারি। আমি সরকারের কাছে দাবি করতে পারি যে তাকে ধরে বিচার করে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু আমি গিয়ে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করব, এটা ইসলামে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, কুমিল্লার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে। শিগগিরই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত ব্রিফ করছেন। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা কাজও করছে। খুব শিগগির অপরাধীরা গ্রেপ্তার হবে।

পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসে ১০ বছরের কারাদণ্ড :বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এমন বিধান রেখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২১' এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এটা ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স ছিল। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা আইনে পরিণত করা হচ্ছে। খসড়া আইনে ১৫টি ধারা রয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছর, সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে খসড়া আইনে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। তবে জরিমানা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উত্তর পত্রের জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, তাদের সর্বোচ্চ দুই বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কোনো পরীক্ষার্থী যদি অসদুপায় অবলম্বন করেন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে অসদুপায়ে সহযোগিতা করে তাহলে সেও সর্বোচ্চ দুই বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। পরীক্ষা-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তিনি বলেন, পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। মোবাইল কোর্টের মধ্যেও এটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে যারা যুক্ত থাকবেন, তাদের বিচারের আওতায় এনে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আইনের খসড়ায় কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কমিশনে কমপক্ষে ছয়জন সদস্য থাকবেন, তবে সদস্য কোনোভাবেই ১৫ জনের বেশি হবে না। একটা আউট লাইন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ফরমেশনটা রুল দিয়ে করে দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তাদের (পিএসসি) দায়িত্ব হলো সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন রিক্রুটমেন্ট ও অন্যান্য মতামতের বিষয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবে। কমিশনকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রদান করতে হবে, এমন একটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইনে। পরীক্ষা পদ্ধতি কীভাবে হবে সেটাও উল্লেখ রয়েছে।

কিছুদিন থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে আইন :জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনায় আইন করছে সরকার। এজন্য মন্ত্রিসভায় 'জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১' এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, জাকাত তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারিভাবে সংগৃহীত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যে কোনো তপশিলি ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে জাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী চেয়ারম্যান থাকবেন।

আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'সরকারিভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারিভাবে জাকাত দানে উদ্বুদ্ধকরণ। জাকাত সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, জাকাত দানে আগ্রহী ব্যক্তিদের জাকাতযোগ্য সম্পদের বিষয় খসড়া আইনে রয়েছে।'

তিনি আরও জানান, জাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবে ১০ জন। ইসলামী ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দেবে। কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনটা তারা করবেন। এ ছাড়া 'চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ আইন, ২০২১' এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

ই-কমার্স নিবন্ধনের আওতায় আসবে :ই-কমার্স ব্যবসায় সম্পৃক্ত সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় এনে তদারক করবে সরকার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ই-কমার্স হয়তো বন্ধ করা যাবে না। তাই এ জাতীয় ব্যবসায় যারা জড়িত, তাদের সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় এনে তদারক করতে হবে। এগুলো কীভাবে করা যাবে, সে প্রক্রিয়াগুলোও করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। দু-এক মাসের মধ্যেই প্রক্রিয়াগত ভালো অগ্রগতি বলা যাবে। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কয়েক দিন আগে এক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। আগামী ২০ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিব দু'জনই জানিয়েছেন, কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2