দলীয় এমপিরাও সরকারকে ছেড়ে কথা বলছেন না
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৩১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের সমালোচনায় মুখর তারা। সরকারের ‘আমলা নির্ভরতার’ সমালোচনা করেই মূলত সংসদে সিনিয়র সদস্যদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
‘অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা’
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ দলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। সরকার অতিমাত্রায় আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তার।
করোনা সংক্রমণকালে সচিবদের জেলা সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘করোনার সময় এমপিরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। এখন আমাদের জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেন। অথচ প্রশাসনিক যাঁরা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু কোথাও যাননি। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনিও এখন পর্যন্ত যাননি। এটা ঠিক নয়। এতে রাজনীতিবিদদের যে কাজ, সেটা ম্লান হয়ে যায়।’
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের জেলা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমেদ।
আরও যত ক্ষোভ
এর আগে সরকারি দলের এমপিদের মধ্যে অধ্যাপক আলী আশরাফ বাজেটে নিয়ে সমালোচনার সূত্রপাত ঘটান। গত ৬ জুন সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনাকালে অর্থপাচারের প্রসঙ্গ টেনে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
অধ্যাপক আশরাফ বলেন, ‘বাজেট তো দিচ্ছি। বাস্তবায়নের সদিচ্ছা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। সেই দেশে আজ ঘৃণা, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এত বড় বড় কিছু চোর…। প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এসবের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
১৪ জুন বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজস্ব সংগ্রহকে বাজেটের ‘মূল চ্যালেঞ্জ’ উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। প্রকল্পগুলো সময় মতো বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বিভিন্ন কারণে সময় মতো হচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় আনা গেলে এটি সম্ভব হবে।’
সরকারি দলের এমপি শাজাহান খান স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি তুলে বলেন, এ খাতে জনবল বৃদ্ধি জরুরি। আড়াইশ’ বেডের হাসপাতাল আছে, কিন্তু জনবল নেই। যার কারণে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক কথা শুনছি। আগামীতে যেন এ খাতে দুর্বৃত্তায়ন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।’
১৭ জুন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা গলায় ‘আর কোনও দাবি নাই, ত্রাণ চাই না বাঁধ চাই’ লেখা প্লেকার্ড ঝুলিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ত্রাণ নিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে জনগণের রোষানলে পড়তে হয়েছিল তাকে। উপকূলের অনেক এমপিকেই এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এলাকাবাসী ত্রাণ চান না। তারা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান।
রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন মুক্তিযোদ্ধা নানাভাবে তৈরি হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা বানানোর এই প্রথা বাদ দিতে হবে।’
মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প হিসেবে পুরুষ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘যারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাঁরা একদিন বলবেন, নারীদের গার্ড অব অনারই দেওয়া যাবে না।’
সংসদের বাইরেও
এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সেমিনারে সরকারি দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “সংসদে বাজেট নিয়ে আমরা আলোচনা বা বিতর্ক করবো, সেটার ভিত্তি ঠিক থাকতে হবে। আমরা সংসদে আছি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার জন্য।”
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার যেটা দেবে, সেটাকেই যদি পাস করে দিতে হয়, তবে অধিবেশনের দরকার নেই।’
২৫ জুন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু জায়গায় পরিমার্জন প্রয়োজন আছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের গতি হলো বাজেট। এটা দ্রুতগতিতে নাকি ধীরগতিতে যাবে, নাকি একই জায়গায় থাকবে তা ঠিক করার অধিকার সরকারের আছে।’
এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান, মুজিবুল হক চুন্নু, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, হারুনুর রশীদসহ বিএনপির সংসদ সদস্যারাও বাজেট আলোচনাকালে বাজেটসহ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
মঙ্গলবার বাজেট আলোচনার সমাপনী দিনে দেওয়া বক্তব্যে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘বাজেট নিয়ে বিরোধীদলীয় সদস্য, আমাদের এমপিরা এবং বাইরেও অনেকে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তারা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। বোধহয় উপলব্ধিটা তাদের নেই। তবে তারা বিষয়টি বুঝবেন এটা প্রত্যাশা করি।’