avertisements 2

সাড়ে ৭ বছর পর বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ০৩:৩৫ পিএম, ৮ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৫

Text

উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হবে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় নয়, খালেদা জিয়াকে সরাসরি নেওয়া হবে লন্ডনের হাসপাতালে। তাঁকে নিতে কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল সোমবার ঢাকায় এসেছে। এদিকে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশযাত্রা উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 

লন্ডনের চিকিৎসকরা সুপারিশ করলে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নেওয়া হবে। চিকিৎসা শেষে তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন– এ তথ্য জানাতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসকরা। এ অনিশ্চয়তায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। 

৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরের দুই বছর দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে একাকী কাটান। নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হলেও পরের চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালে কাটে নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার। বারবার আবেদনেও আওয়ামী লীগ সরকার চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ তিনি বিদেশ যান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরের দিনই তাঁর সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করা খালেদা জিয়া আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এক মামলায় খালাস পেয়েছেন। অন্যটিতে তাঁর সাজা স্থগিত হয়েছে আপিল বিভাগে। এর মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনার পতনে বিএনপি নেতাকর্মীরা ধরপাকড় থেকে রেহাই পেলেও, দলটি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে নেই ১৭ বছর। এমন সময়ে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অস্বস্তি তৈরি করেছে দলটির নেতাকর্মীর মধ্যে। 

এদিকে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার খবরে যে রাজকীয় উড়োজাহাজ পাঠিয়েছেন, তাতে আইসিইউসহ সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ছয়জন চিকিৎসক, নার্স ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকবেন। সম্ভাব্য জরুরি প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে আরেকটি উড়োজাহাজ। ফ্রান্সের এয়ারবাসের তৈরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা থেকে দোহা হয়ে লন্ডন যাবে। সেখানে হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন তারেক রহমান। 

গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করবে। কাতারের চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিকসরা থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য বিমানে যাবেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ  কয়েকজন সঙ্গে যাবেন। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতায় সবাই দোয়া করেছেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রয়েছে। এর চিকিৎসায় টিপস (চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট, অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর যাচাই করতে হয় তা ভালোভাবে কাজ করছে কিনা। বাংলাদেশে তা করা যায়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের হৃদরোগ এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে। করোনা সংক্রমণে কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিয়েছেন, তা তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ। এ নিয়ে পরিবার বা দলের অসন্তুষ্টি নেই। 

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, যদি লন্ডনের চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন, তাহলে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। 

বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তা
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার সমম্বয়ে বৈঠক করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কর্মকর্তারা জানান, বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর জমায়েতে যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য বিশেষ এই সতর্কাবস্থা। 

বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার জানান, ১০ প্লাটুন পুলিশ থাকবে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বেবিচকের এ্যাফসেক বাহিনীসহ সোয়াটের মতো স্পেশাল টিমও থাকছে। 

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকবে।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2