ঘৃণাস্তম্ভ মুছে ফেলা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:২৫ এএম, ৩ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৫
আমার এক বিদেশে থাকা বন্ধু, যিনি বহু বছর ধরে হাসিনাশাহীর বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ছিলেন, তিনি এয়ারপোর্টে নেমেই বায়না ধরেন যে আগে ঘৃণাস্তম্ভে যাবো এরপর বাড়ি ফিরবো। জেট ল্যাগের ক্লান্তি ভুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে এসে সেই ঘৃণাস্তম্ভে তিনি ছবি তুলেন। খুনি হাসিনার প্রতিকৃতিতে অসংখ্য জুতা আর ঘৃণার যে গণস্ফুরণ তা জুলাই আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক।
অথচ, শনিবার গভীর রাতে সেই প্রতিকৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তা দেখে প্রতিবাদ করে আটকালেও ততক্ষণে খুনি হাসিনার ছবি মুছে গেছে। ছাত্রদের জেরার মুখে জানা যায় যে তা গোয়েন্দা বিভাগ বা এনএসআইয়ের আদেশে করা হয়েছে। পরে অবশ্য জানা যায় যে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের হুকুমেই করা হয়েছে।
যার নির্দেশেই করা হোক, ঘটনাটি জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। অবশ্য জুলাই আন্দোলনের চিহ্ন এবং একতা মুছে ফেলার চেষ্টা এই প্রথম নয়। আগস্টের পর থেকেই ব্যাপারটি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার হলেও জুলাই আন্দোলনে দারুণ ভূমিকা রাখে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। যেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই সময় প্রাইভেটের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় নেমে আসে, সঙ্গে যোগ দেন শ্রমিক মেহনতি মানুষেরা।
তবে, ইতিহাস এবং স্থানিক সুবিধার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই কেন্দ্রে থাকে। শহীদ মিনার, রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ চত্বর হয়ে উঠে গণমানুষের মিলনমেলা। আগস্টে আকস্মিক বন্যায় টিএসসি হয়ে উঠে গোটা দেশের মানুষের কেন্দ্রবিন্দু।
কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই ব্যাপারটাকে পদদলিত করে। নিজেদের আলাদা দাবি করে তাঁরা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয় ‘বহিরাগতদের’ জন্য। ক্যাম্পাসের ভেতর গাড়ি চলতে না পারায় এমনিতেই যানজটে জর্জরিত ঢাকা শহরে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
যেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে মানুষ, যেই ভোটাধিকারের জন্য জীবন দিয়েছে, তাকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক রাজনীতিতে। নতুন বন্দোবস্তের নামে নানারকম কার্যকলাপ চলে।
সন্দেহ নাই, দেশের মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর অতিষ্ঠ। সংস্কার অতি জরুরি, কিন্তু তাই বলে নির্বাচন থেকে বেশিদিন বঞ্চিত করার সুযোগ নাই। কারণ সংস্কার একদিনে হওয়ার জিনিস না বা একবারে হওয়ার জিনিস। ব্যাপারটি চলমান প্রক্রিয়া।
তদুপরি, পতিত স্বৈরাচার তার বিপুল দুর্নীতির অর্থ আর ক্ষমতা নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য হায়েনার মতো অপেক্ষা করছে। এসময় দরকার একতা। যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের আন্দোলন করলো এত বছর, তাঁদের ছুড়ে ফেললে সেই একতা নষ্ট হবে।
ঘৃণাস্তম্ভ মুছে ফেলা সেই একতা নষ্টের প্রমাণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার প্রমাণ।