avertisements 2

রামগড়ে পাহাড় গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:০৯ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবাধে চলছে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলনের উৎসব। পাহাড় খেকোরা হরেক রকম করে নির্বিচারে কাটছে পাহাড়, বনাঞ্চল, ফসলি মাঠের জমি ও বালু উত্তলন করেই যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে কয়েকটি স্পটে এই পাহাড় কাটার উৎসব চললেও নির্বিকার রয়েছে প্রশাসন।

জানা যায়, প্রতিবছর এ পাহাড় কাটার এ উৎসব মূলত শুরু হয় বছরের শেষে বৃষ্টি না থাকলে। তবে এ বছর সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ধর্মীয় স্থাপনা ভরাটের অজুহাত দেখিয়ে পুরো সময় জুড়েই পাহাড় কেটে চলছে একটি চক্র। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে জরিমানা করলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেখানে পুরোদমে আবারো পাহাড় কাটা শুরু হয়ে যায়। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটায় যতসামান্য জরিমানা ছাড়া বড় কোন শাস্তি না দেয়ায় প্রশাসনকে দুষছে স্থানীয় জনগণ।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি ব্যবসায়ী জানান, ইটের ভাটায় ট্রাক প্রতি মাটি বিক্রি করা হয় ২৫০০ টাকায়। এর মাঝে ভাটা মালিকরা তাদের ১৮০০ টাকা করে দেয়। বাকি টাকা প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করবে বলে রেখে দেয়।

তিনি আরো জানান, অনেক গুলো সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। মাটি বিক্রি নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগড় উপজেলা প্রশাসন থেকে কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রকাশ্যে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চিনছড়ি পাড়ার ফুলকুমারি টিলা, বিড়ি কোম্পানির টিলা, ৫নং ওয়ার্ডের আদর্শপাড়ার জামালের টিলা, হকটিলা ও ৮নং ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার মন্নান কোম্পানির টিলায় নির্বাচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

এছাড়াও উপজেলার পাতাছড়া, বলিপাড়া, বৈদ্যটিলা, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, লালছড়ি, নতুনপাড়া, নব্বই একর, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা, মুসলিমপাড়া, ভতচন্দ্রপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গাসহ অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আইন অমান্য করে এস্কেভেটর (ভ্যাকু), কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে। যার ফলে পাহাড়ের ওপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা। কোথাও খাড়া ভাবে, আবার কোথাও কাটা হচ্ছে আড়াআড়ি ভাবে। আর কিছু কাটা হচ্ছে উঁচু চূড়া থেকে। এভাবে হরেক রকম কায়দায় কাটা হচ্ছে রামগড়ের বিভিন্ন পাহাড়। এসব মাটি সরকারি প্রকল্প, পুকুর ভরাট, রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।


অভিযোগ রয়েছে পাহাড়খেকো মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন। যার ফলে নিজের ভিটের মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করেনা তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানান, রামগড়-ফেনী মহাসড়কসহ উপজেলার প্রতিটি অলি গলির রাস্তাগুলো যেন এক রকম মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি। চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের কোন সঠিক নজরদারি নেই। যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।

রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিকুর রহমান সুমন বলেন, এভাবে পাহাড় কাটতে থাকলে রামগড়ে একটি পাহাড়ও থাকবে না। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে মানুষ। প্রতিবছর এমনিতে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের এখনই সঠিক সময় এ পাহাড় খেকো চক্রকে থামানো।

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, কারো ব্যক্তিগত দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা এ বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।


রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি উৎসবে পরিনত হয়েছে। মাটি বহনকারী ডাম্পার ও মিনি ট্রাকের বাড়তি ওজনে পৌর এলাকার রাস্তা ঘাট সংস্কার করেও লাভ হচ্ছে না। দুয়েকদিন পরেই ভেঙে যায়।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা জানান, ভয়াবহ হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার পরেও প্রশাসন নির্বিকার। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বাংলাদশে পরিবেশ অধিপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান, পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2