গ্লাসে ফেনসিডিল ঢেলে দেন স্ত্রী, টাকা নেন ইউপি সদস্য!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ জুন,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
লালমনিরহাটে ইউপি সদস্যের বাড়িতে ফেনসিডিলের আসর বসে। সেই আসরে ফেনসিডিল পরিবেশন করছেন তার স্ত্রী, ইতোমধ্যে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন- বাদশা মিয়া। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য। তিনি ওই ওয়ার্ডের মালগাড়া গ্রামের বাসিন্দা।ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্যের স্ত্রী একদিন ২০ টাকা কম পাওয়ায় এক ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তখন ওই ব্যক্তি বলেন, এখানে প্রশাসন আসে না?ভিডিওতে ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে বলতে দেখা যায়, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসন আসার ক্ষমতা রাখে না। ম্যাজিস্ট্রেট হলে সমস্যা থাকে।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, আজ দাম বাড়ানোর জন্য ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে গিয়ে খান। এখানে আসছেন কেন? ইনট্যাক খান, খোলা খাবেন কেন? ওই ব্যক্তি বলেন, সব সময় ইউপি সদস্যের (মেম্বারের) বাড়ি এখানে নিরাপত্তা বেশি। সে জন্য আসি। এটাকে দুর্বল ভাববেন কেন?ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ফেনসিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেয়ার সময় তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের বর্ণনা দেন এক ক্রেতা। যা শুনে বাদশা তার স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে শাসন করেন। বলেন, ২০ টাকার জন্য তোকে এ কথা বলতে হবে কেন?
এ নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত বাদশা মিয়া। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে গোড়ল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর আবার শুরু হয় তার মাদক ব্যবসা।তারা আরও জানান, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন ফেনসিডিল খেতে আসে বাদশার বাড়িতে। সীমান্ত কাছে হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচার করে বাদশার বাড়িতে পাঠায়। তার বাড়ি থেকে ফেনসিডিল চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর এসব নিয়ে কেউই তার ভয়ে মুখ খোলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক প্রতিবেশী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউপি সদস্য বাদশা মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। বললে মামলা-হামলার ভয় দেখান। এমনকি বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই দামি গাড়িতে করে অনেকেই তার বাড়িতে আসেন মাদক পান করতে।তবে এসব বিষয়ে জানার জন্য গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়াকে ফোন করলে তিনি সব অস্বীকার করেন।গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আমিন বলেন, ইউপি সদস্য বাদশাহ বিগত সময় মাদক ব্যবসা করেছিল। এখন করে কি না, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তার একটি ছেলে কারাগারে রয়েছে। তবে কী কারণে জেলে গেছে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বাদশা যদি মাদক ব্যবসা করে, তবে অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হোক।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম গোলাম রসুল বলেন, ইউপি সদস্য যত বড় মাপের নেতা হোক, তাকে ধরা হবে। এই থানায় মাদক ব্যবসা করতে দেব না।তিনি আরও বলেন, আমি নতুন এসেছি। এখনো অনেক কিছু আমার জানা নেই। ধীরে ধীরে সব তথ্য পাচ্ছি। সবাই সহযোগিতা করলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্যের বাড়িতে ফেনসিডিল ব্যবসা হয়, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এখন জানলাম। অবশ্যই দ্রুত অভিযান চালানো হবে।