শ্রাদ্ধে শিশুরা, কাঁদলেন মায়েরা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১৭ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মা মানু রানী সুশীল ও নিহত পাঁচজনের সন্তানসহ স্ত্রীরা। গতকাল সকাল ১১টায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হাসিনাপাড়ায়।
শিশু অর্ক, আয়ুষ্মান, অভি ভোর থেকে উপোস। ক্ষৌরকর্ম সেরে সকাল ৯টায় তাদের গোসল করানো হয়। পরানো হয় ধুতি। ছোট্ট তিন শিশুর এত সব প্রস্তুতির কারণ একসঙ্গে তাদের বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন।
তিন শিশুকে পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদনে সহযোগিতা দেন সদ্য স্বামীহারা মায়েরা। পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর শোককে পাথরচাপা দিয়ে সন্তানদের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদনে সহায়তা দিতে হয় মায়েদের। স্বজনরা প্রার্থনা করেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা রক্তিম শীলের সুস্থতার জন্য। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় তিন শিশু আহার গ্রহণ করে।
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটের হাসিনাপাড়ার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। স্বজনরা ডুকরে কেঁদে ওঠেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা সারতে গিয়ে এলাকার মহাসড়কে পিকআপের চাপায় পাঁচ ভাই নিহত হন।
সুরেশের নিহত পাঁচ সন্তান হলেন অনুপম শীল, নিরূপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীল। অর্কের বাবা অনুপম, মা পপি শীল। আয়ুষ্মানের বাবা দীপক, মা পূজা শীল। অভির বাবা স্মরণ, মা কৃষ্ণা শীল। চম্পকের স্ত্রী দেবীকা শীলের দুই সন্তান। নিরূপমের স্ত্রী গীতা শীলের সন্তান নেই।
গত ৩০ জানুয়ারি মারা যান সুরেশ চন্দ্র শীল। তাঁর ছোট ভাই চিত্তরঞ্জন শীল কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির কাছে মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় পিকআপচাপায় একসঙ্গে নিহত হন তাঁর পাঁচ ভাইপো অনুপম শীল, নিরূপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীল। ওই সময় গুরুতর আহত হন আরেক ভাইপো রক্তিম শীল। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জেনালের হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন। আর রক্তিমের দুই বোনের মধ্যে হীরা শীলের এক পা কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি স্থানীয় মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার ভয়াবহতা দেখে সহ্য করতে না পেরে রক্তিমের আরেক ভাই প্লাবন শীল ব্রেন স্ট্রোক করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরেক বোন মুন্নি শীল সুস্থ আছেন। অর্থসংকটে পরিবার
নিহত পাঁচ ভাইয়ের মা মৃণালিনী শীল বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের মৃত্যু, অপর সন্তানেরও প্রাণ যায় যায় অবস্থায়। আরেক সন্তান ব্রেন স্ট্রোক করল, মেয়ে হীরার পা কেটে ফেলায় পঙ্গু হলে গেল। এতে আটটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। আমার পরিবারে আয় করার মতো আর কেউ থাকল না। এই অবস্থায় সংসার চালানো যেখানে কঠিন, সেখাকে তাদের চিকিৎসা ব্যয় মিটবে কিভাবে? এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেবেন, সেই আশায় আছি। ’ নিহত স্মরণ শীলের স্ত্রী কৃষ্ণা শীল বলেন, ‘সন্তানদের কী হবে? তাদের লালন-পালন কিভাবে করব আমরা। ’ চার দিনেও চালক গ্রেপ্তার হয়নি
গতকাল সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেন নিহতদের বাড়িতে যান। তখন নিহতদের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশ কর্মকর্তা পরিবারের সদস্যদের কাছে জানতে চান, চাপা দেওয়া পিকআপটি কোন রঙের ছিল? এ সময় উপস্থিত লোকজনের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তদন্তকারী কর্মকর্তা চলে যান।
অনিল কান্তি শীল নামের এক স্বজন বলেন, পুলিশ তো এরই মধ্যে একটি গাড়ি জব্দ করেছে বলে দাবি করেছে। তাহলে তো তারা জানেই গাড়িটি কোন রঙের। জব্দ পিকআপের নাম্বার ভুয়া
হাইওয়ে পুলিশের জব্দ করা পিকআপটিতে নাম্বার ছিল ‘চট্ট মেট্রো-ন-১১-৪৭৪০’। এই নাম্বারটি ভুয়া বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। বিআরটিএ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইঞ্জিন ও চেসিস নাম্বারের সূত্র ধরে নিশ্চিত হওয়া গেছে প্রদর্শিত গাড়ির নাম্বারটিও ভুয়া। গাড়িটির ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ১২ মে।