নিয়েছেন উপহারের ঘর, থাকেন অন্যত্র
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:১৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় মুজিববর্ষে উপহার হিসেবে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পরিবার ঘর দখলে রাখলেও বসবাস করছে না। নিজের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে অন্যত্র থাকছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বগাছড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়েছে আট পরিবার। এর মধ্যে সেখানে বসবাস করছে তিনটি পরিবার। বাকি চার পরিবারের সদস্যরা মাঝেমধ্যে ঘর দেখতে আসেন, আরেক পরিবারের সদস্যরা আসেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটি-নানিয়ারচর মূল সড়কের পাশেই বগাছড়ি এলাকায় একসঙ্গে উপহারের ঘর ও জমি পেয়েছে আটটি পরিবার। এর মধ্যে পাঁচটি ঘরে তালা। বাকি তিনটিতে বসবাস করছেন উপকারভোগীরা।
পাঁচটি পরিবার ঘর দখলে রাখলেও বসবাস করছে না
যে তিন পরিবার বসবাস করছে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তালাবদ্ধ ঘরগুলোতে কেউ থাকেন না। যারা ঘর পেয়েছেন তারা অন্যত্র থাকেন। কারণ অন্যত্র তাদের ঘর আছে, ব্যবসা আছে। তবে মাঝেমধ্যে ঘর দেখতে আসেন চার পরিবারের সদস্যরা। বাকি এক পরিবার দীর্ঘদিন আসে না।
প্রকল্পের আওতায় ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন—নানিয়ারচরের খাদিজা বেগম, নাসিমা বেগম, সালমা বেগম, শাহানুর বেগম, মো. জমির আলী, মুক্তা দাশ, কনক দাশ ও দুলালী খীসা। এর মধ্যে খাদিজা, নাসিমা ও সালমার পরিবারের সদস্যরা ঘরে বসবাস করছেন।
জমির সপ্তাহ দুয়েক পরপর ঘর দেখতে আসেন। শাহানুর, মুক্তা ও কনক মাঝেমধ্যে ঘর দেখতে আসেন। দুলালী ঘর পাওয়ার পর কয়েকদিন থাকলেও পরে আর আসেননি বলে জানালেন খাদিজা, নাসিমা এবং সালমা।
উপহারের ঘরে তালা
নাসিমা বেগম বলেন, ‘এখানে আমরা আট পরিবার ঘর পেয়েছি। তিন পরিবার থাকে। বাকি পাঁচ পরিবার নানিয়ারচরে থাকে। মাঝেমধ্যে ঘর দেখতে আসেন তারা।’
ভাঙারির ব্যবসা করেন বলে জানিয়েছেন উপকারভোগী জমির আলী। ঘরে বসবাস না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আয়-উপার্জন করার উৎস নেই। ফলে সপ্তাহের কিছুদিন এখানে থাকি, বাকি কয়েকদিন উপজেলার পুরনো বাড়িতে থাকি। এখানে উপার্জনের ব্যবস্থা থাকলে স্থায়ীভাবে থাকতাম।’
এ বিষয়ে জানতে কনক দাশ, মুক্তা দাশ ও দুলালী খীসার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। শাহিনুরকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ঘরে না থাকা ওসব পরিবার উপজেলা শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য কাজ করে। যার কারণে এখানে না থেকে উপজেলা শহরে থাকে।
অবশ্য বিষয়টি আগে থেকেই জানেন বলে স্বীকার করেছেন বুড়িঘাট ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে আট পরিবারকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়। এই এলাকায় উপার্জনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ উপকারভোগী অন্যত্র থাকছেন। বিষয়টি জানার পর কয়েক মাস আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
তিনটি ঘরে বসবাস করছেন উপকারভোগীরা
এ ব্যাপারে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, ‘যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে, তাদের সেখানে থাকার জন্যই দেওয়া হয়েছে। ঘর ফাঁকা রাখার সুযোগ নেই। কেন ঘরে থাকেন না, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজন হয়, তা আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। এরপরও কেউ ঘরে না থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাঙামাটিতে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৪৫টি ঘর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, ‘ঘরে না থাকার এরকম অভিযোগ আর পাওয়া যায়নি।’