avertisements 2

ভেঙে ফেলা হচ্ছে এরশাদ শিকদারের সেই 'স্বর্ণকমল' বাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫৮ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

খুলনার কুখ্যাত খুনী ও ফাঁসি কার্যকর হওয়া এরশাদ শিকদারের বহুল আলোচিত সেই বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভবন ভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে দুইতলা বাড়ির পুরোটাই ভাঙা হচ্ছে না, অর্ধেকের মতো অংশ ভাঙা হচ্ছে। ভেঙে ফেলা বাড়ির স্থানে ৫ কাঠা জমিতে নতুন করে ১০ তলা বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এরশাদ শিকদারের ছেলে-মেয়েদের। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ স্মরণির স্বর্ণকমল বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক লোকজন ভিড় করেছেন সেখানে। তারা দাড়িয়ে আলোচিত-সমালোচিত বাড়িটি ভাঙা দেখছেন। 

উৎসুক লোকজন ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। বাড়ির গেটে ভেতর থেকে তালা দেওয়া থাকায় ইচ্ছা থাকলেও ভেতরে কেউ ঢুকতে পারছেন না। দুইতলা মূল ভবনের ছাদে বড় সাইজের হাতুড়ি ও ড্রিল মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবন ভাঙার কাজ করছেন ৪ জন শ্রমিক।

 বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকজন বলেন, এরশাদ শিকদার বেঁচে নেই। তার নির্মাণ করা তৎকালীন সময়ের বিলাসবহুল বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’ এখনও দেশজুড়ে আলোচিত। বাইরে থেকে খুলনায় এলে অনেকে স্বর্ণকমল বাড়িতে দেখতে আসে। সেই বাড়িটি কেনো ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা জানা নেই।

ভবন ভাঙার কাজে নিযুক্ত শ্রমিক সরদার রবিউল হোসেন বলেন, তিনি শুনেছেন ভবন ভাঙার পর এখানে নতুন করে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।

এরশাদ শিকদারের ছেলে-মেয়েরা জানান, মজিদ স্মরণিতে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ১০ কাঠা জমির ওপর তাদের একটি পুরানো তিনতলা এবং আরেকটি দুইতলা বাড়ি ছিল। দুইতলা ভবনটির নামই মূলত ‘স্বর্ণকমল’। কয়েকদিন আগে তারা পুরানো তিনতলা ভবনটি শ্রমিক দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। এখন দুইতলা ভবনটির অর্ধেকের মতো অংশ ভাঙা হচ্ছে।

এরশাদ শিকদারের মেঝো ছেলে কামাল শিকদার জানান, ১০ কাঠা জমির মধ্যে ৫ কাঠা জমি তার বাবা এরশাদ শিকদারের নামে এবং ৫ কাঠা তার মা খোদেজা বেগম এর নামে। তার মায়ের নামে যে অংশ মূলত সেই অংশের স্থাপনা অপসারণ করা হচ্ছে। ওই ৫ কাঠা জমির ওপর ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার দুটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণের পর ৫০ ভাগ ফ্লাট এবং নিজেরা ৫০ ভাগ ফ্লাট রাখার প্রস্তাবনা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে ওই প্রতিষ্ঠান দুটি রাজি হয়নি। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নিজেরা ৬০ শতাংশ ফ্লাট রাখতে চাইছে। সে কারণে বিকল্প চিন্তাও আছে। যদি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায় তাহলে নিজেরাই ওই ৫ কাঠা জমির উপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ করবেন বলে পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি জানান, বাবার স্মৃতি হিসেবে মূল স্বর্ণকমল বাড়ির অর্ধেকের বেশি অংশ থাকবে। এখন ওই বাড়িতে তার ছোট ছেলে হেলাল শিকদার, হেলালের স্ত্রী ও এক ছেলে থাকে।

এরশাদ শিকদারের বড় ছেলে মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল ও মেঝো ছেলে কামাল শিকদার বর্তমানে ঠিকাদারি ও ছোট ছেলে হেলাল শিকদার ব্যবসা করেন। মেয়ে সুবর্ণা ইয়াসমিন স্বাদ বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। জামাল শিকদারের ২ মেয়ে, কামাল শিকদারের ৩ ছেলে, হেলাল শিকদারের ১ ছেলে এবং সুবর্ণার ৩ ছেলে।

এরশাদ শিকদার জীবিত থাকাকালে বিলাসবহুল ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর ‘স্বর্ণকমল’ তৈরি করেছিলেন। বাড়ির ভেতর পেচানো সিড়ি দিয়ে উঠে যেতে হয় দোতলায়। পেছনেও রয়েছে একটি সিড়ি। বাড়ির প্রত্যেকটি ঘর তখন সাজানো হয়েছিলো দামীদামী সব আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রি ও শোপিস দিয়ে। এ বাড়িতে এরশাদ শিকদারের প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা বসবাস করতেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহার শোভা তার সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র থাকেন।
 
এরশাদ শিকদার বাড়িটির নকশা তৈরি করে এনেছিলেন ভারত থেকে। এরশাদ শিকদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে পুলিশ একাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছিল।
 
২০০৪ সালের ১০ মে হত্যা মামলায় খুলনা জেলা কারাগারে দেশজুড়ে আলোচিত এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক হত্যা, অসংখ্য ধর্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা ছিল।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2