avertisements 2

খুলনার ছোট্ট মীম ফিরলো ২৬ জনের লাশ নিয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১৬ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

মীম আক্তার। খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারখালির গ্রামের মনির মিয়া ও হেনা দম্পতির সন্তান। বয়স ৯ -১০ বছর। মা-বাবা আর দুই বোন নিয়েই মীমদের সংসার। এত দিন পৃথিবীর কোনো নিষ্ঠুরতা টের পেতে দেননি মা-বাবা। মীমের দাদী মারা গেছেন রবিবার (২ মে) রাতে। সেই খবর শুনেই বাবা আর মায়ের সাথে যাচ্ছিল দাদীকে শেষ দেখা দেখতে এবং দাফন করতে। দাদর মৃত্যুর খবরে মা-বাবা ও দুই বোনের সঙ্গে মীমের পুরো পরিবার ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন খুলনার তেরখাদার বারুখালি গ্রামে দাদাবাড়ী। কিন্তু পথে মর্মান্তিক স্পিডবোট দুর্ঘটনায় তার দাদীর লাশ দাফনের আগেই হারিয়েছে পরিবারের সবাইকে। এ দুর্ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে প্রাণ হারান মীমের বাবা মনির মিয়া (৩৮), মা হেনা বেগম (৩৬), ছোট দুই বোন সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩)। দুর্ঘটনার পর মীম ব্যাগ ধরে ভেসে থেকে কোনো রকমে প্রাণ বাঁচায়, জীবিত উদ্ধার হয় মীম। দুর্ঘটনায় স্পিডবোট দুমরে মুচরে যায়। মাথায় আঘাতের ক্ষত নিয়ে ঘটনার আকস্মিকতায় এখন নির্বাক মীম।

মা-বাবা ও দুই বোনের লাশ রাখা শিবচরের কাঁঠালবাড়ী দোতারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মীমকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ শনাক্তের জন্য নেওয়া হলে তার কান্নায় চোখের কোণে জল জমেছে উপস্থিত সবার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নানাভাবে মীমকে সান্ত্বনা দিয়েও কান্না থামাতে পারেননি। পরিবারে তেমন কেউ না থাকায় এরপর লাশের গাড়ির সামনে বসে মিম তার মা-বাবা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে রওনা দেয় তেরখাদার বারুখঅলি গ্রামে। ছোট শিশুটির মা-বাবা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে ছুটে চলার দৃশ্যপট যেন দুর্ঘটনার ভয়াবহতারই জানান দিচ্ছিল। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজনকে দেওয়া হয় মীমের সঙ্গে। লাশগুলো সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পৌঁছে নিজ বাড়িতে। শুধু মীমই নয়, মাতম ছড়ায় দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ লাশের স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদেই।।

মীম জানায়, চাচাদের সঙ্গে ঝগড়ার কারণে তার বাবা মনির মিয়া ঢাকায় টিউশনি করে কোনো রকমে সংসার চালান। দাদীর মৃত্যু সংবাদে তারা বাড়ি ফিরছিল। পরিবারের কেউই এখন আর বেঁচে রইলো না। মীম এখন কোথায় যাবে, কোথায় খাবে? এই প্রশ্ন শোনা বা করারও কেউ আর রইল না। এই প্রশ্ন মনে আসতেই চারদিক তাকিয়ে কাউকেই আর মিলল না। কারণ লাশ চারটির অভিভাবক যে ওই ছোট্ট মেয়ে মীম।

উল্লেখ্য, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্পিডবোট ডুবিতে তিন শিশু ও দুই নারীসহ ২৬ জন নিহত হয়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2