avertisements 2

বিপুল সম্পদ খালেক ও তাঁর উপমন্ত্রী স্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ মে,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

নিজের নামে গাড়ি, বাড়ি আর জমি। স্ত্রীরও আছে বাড়ি, সঞ্চয়পত্র, রাজউক পূর্বাচলে প্লট। দু’জনে মিলে বিপুল সম্পদের মালিক খুলনার সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং তাঁর স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। দু’জনের বছরে আয় ৫৯ লাখ টাকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের (কেসিসি) তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে শীর্ষে রয়েছেন তালুকদার খালেক।

তবে আয় বেশি জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর। বছরে তাঁর আয় ৯০ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণেও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকার সম্পদ থাকলেও তাঁর রয়েছে ৫২ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

হলফনামায় মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক উল্লেখ করেছেন, বছরে কৃষি খাত থেকে আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, মেয়র পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

হলফনামায় দেখা গেছে, তালুকদার খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তাঁর। দুটি গাড়ির মালিক তিনি। এর মধ্যে একটি গাড়ির দাম দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ টাকা এবং মাইক্রোবাসের দাম দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাঁর এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৭ লাখ টাকা।

স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তাঁর জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন তিনি। সেটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এ ছাড়া তাঁর ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমি আছে। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।

তাঁর স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।

সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামায় তালুকদার খালেক কৃষি, মৎস্য ঘের, ব্যাংকের সুদ ও সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ভাতা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছিলেন ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া ও ব্যাংকের সুদ থেকে তাঁর স্ত্রীর বছরে আয় ছিল ১১ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে তালুকদার খালেক তাঁর মোট সম্পদের মূল্য দেখিয়েছিলেন ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ ছিল ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আয় ও সম্পদের ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সমকালকে বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও দু’বার মেয়র ছিলাম। আমার যে আয় ও সম্পদ আছে, এর সব তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছি।’

শফিকুল ইসলাম মধু
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধুর আয় বছরে বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে– নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর, একটি গাড়ির মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা।

স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি, টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি; যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় তাঁর ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘আমি হলফনামায় কোনো তথ্য গোপন করিনি। আয়কর রিটার্নেও সবকিছু উল্লেখ রয়েছে।’

আব্দুল আউয়াল
ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়ালের বার্ষিক আয় ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ও মাদ্রাসার শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। আব্দুল আউয়াল বলেন, আমার আয় ও সম্পদ অন্য প্রার্থীদের তুলনায় কম।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মামলা
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম মধু স্বশিক্ষিত। তালুকদার খালেক বিএ ও আবদুল আউয়াল কামিল পাস। তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল ৯টি। এর মধ্যে চারটিতে অব্যাহতি ও পাঁচটিতে খালাস পান। অন্য দুই প্রার্থীর কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে তাঁরা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিভিন্ন ব্যাংক, আয়কর বিভাগ, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। সবার তথ্য ঠিকমতো আছে কিনা তা তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2