avertisements 2

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন, অস্ট্রেলিয়ার অনুপম সন্ধ্যা!

পরমেশ ভট্টাচার্য
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ মার্চ,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৪ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

গত ১২ই মার্চ'২২, রোজ শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক এই প্রথম সিডনিতে "বিএইউ অ্যালামনি সন্ধ্যা" নামে একটি অনুপম সন্ধ্যা ও নৈশ ভোজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো সিডনির উপ-শহর, রকডেল এর অতি পরিচিত 'রেড রোজ ফাংশন সেন্টারে।'  

অত্যন্ত জাঁকজমক, আনন্দঘন পরিবেশ আর বর্ণিল উৎসব আমেজে অনুষ্ঠিত হলো কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, ঐতিহ্য আর গৌরবের বাংলাদেশ কৃষি  বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অ্যালামনি এসোসিয়েশন এর এই অনুষ্ঠানটি। উপচে পড়া অ্যালামোনাই এবং তাঁদের পরিবারের ভিড়ে হলঘরটি ছিল কানায় কানায় দর্শক পূর্ণ।  এই "বিএইউ অ্যালামনি নাইট" শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সহ আমন্ত্রিত অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে রকডেল এর এই হলটি। সকলের মাঝেই এক অনাবিল আনন্দ আর উৎসবের আমেজ। মহামারী করোনায় সুদীর্ঘদিন গৃহবন্দী জীবনের পর এই  বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা এবং তাঁদের পরিবার পরিজন পরস্পর পরস্পরকে উন্মুক্ত পরিবেশে কাছে পেয়ে সবাই যেন তাঁদের প্রাণের স্পন্দন অনুভব করেন। অনেকেই উদ্বেলিত মনে অতীতের মধুর সুখ স্মৃতি রোমন্থনে আবেগী ও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ডিজিটাল পর্দায় বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস ও সংস্কৃতি কে  এমনভাবে তুলে ধরা হয় যেন এক টুকরো প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কেই দেখছিল অ্যালামোনাইগন। সবাই সোনালি অতীতের স্মৃতি মধুময় ছবিগুলো দেখে হয়েছে আবেগে আপ্লুত। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবাই ফিরে গেছে তাঁদের প্রিয় অতীতে, প্রিয় ক্যাম্পাস এর আনাচে-কানাচে, ঘুরে ফিরে দেখছে তাঁদের ফেলে আসা শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অপরূপ সৌন্দর্যে মন্ডিত সবুজ চত্বরের বিদ্যাপীঠ কে। পাশাপাশি পুরো অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে বাকৃবি'র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করেছে এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও উদ্দীপনা। সবাই যেন আবার তাঁদের হল জীবনের সেই সবুজাভ সতেজ জীবন ফিরে পেয়েছে যা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝানো যাবে না। হলের বাইরে এবং ভেতর মিলিয়ে চারদিকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে "বিএইউ অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া" এর ছাত্র ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে সুখানন্দের এক বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাস আর উল্লাসের মিলনমেলা। বলতেই হয় উপচে ভরা হল ভর্তি প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখর ছিল। সুদূর প্রশান্ত পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যেন এক টুকরো বাকৃবি। পুরোনো স্মৃতিকে রোমান্থন -  সত্যিই এ এক দারুণ এবং বিরল অনুভূতি!

বাকৃবি অ্যালামোনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেছ বাবুল এবং সভাপতি ডঃ আনোয়ারুল ইসলাম বকসী এর  শুভেচ্ছা ও স্বাগত বক্তব্য এর মধ্য দিয়ে এই "বিএইউ অ্যালামনি সন্ধ্যা" অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন ঘটে। আর বাকৃবি এর পরিচিত ও প্রিয় মুখ ডাঃ লাভলী রহমান এবং "বিএইউ অ্যালামনি নাইট" উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক, তারুণ্যে উজ্জ্বীবিত ডঃ আসাদুজ্জামান সেলিম এর সাবলীল ও সুন্দর সঞ্চালনায় প্রথমেই পবিত্র কোরআন তেলোওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে সবার প্রাণের টানের এই অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্বের শুভ সূচনা ঘটে। তারপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও সপরিবারে নিহত সকল সদস্য সহ জাতীয় চার নেতা ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লক্ষ ভাই-বোন এবং সর্বোপরি, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও বহির্বিশ্বে প্রয়াত কৃতি অ্যালামোনাইদের আত্মার চিরশান্তি কামনার্থে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।  

এরপর শুরু হয় প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে কৃতি অগ্রজ ও অনুজ সতীর্থদের স্মৃতি মধুর আলোচনা। এই স্মৃতি তর্পণ এর ফলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবাই ফিরে যায় তাঁদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাকৃবি'র সবুজ চত্বরে ফেলে আসা সোনালি অতীতে। তারপর সম্প্রতি প্রয়াত কৃষিবিদ, কৃষিবিদদের সবার প্রিয় মুখ, স্মরণীয় ও বরণীয় কৃতি বিএইউ অ্যালামোনাই, মরহুম মোতাহার হোসেন কে নিয়ে স্মৃতিচারণ। কৃষিবিদ কমিউনিটির প্রতি তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়।  সম্মাননা হিসেবে একটি সুন্দর ক্রেস্ট মোতাহার ভাই এর পরিবারের হাতে তুলে দেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বয়। এই ক্রেস্ট গ্রহণ করে পরিবারের পক্ষে মোতাহার ভাই এর একমাত্র কন্যা, আমাদের সবার প্রিয় মুশফেকা আহমেদ মুমু  তাঁর প্রয়াত বাবাকে গভীর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য অ্যালামনি এসোসিয়েশন এর সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই সময় পিন পতন নীরবতায় উপস্থিত হলভর্তি অ্যালামোনাই সহ অতিথিবৃন্দ ছিলেন আবেগে আপ্লুত। মুহূর্তের জন্য হলেও সবাই হয়েছিলেন অশ্রু সজল। 

তারপর শুরু হয় কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাডমিন্টন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সকল অংশ গ্রহনকারী সহ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দের মাঝে পুরস্কার বিতরণ পর্ব। আর এই পর্বটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন কৃতি অ্যালামোনাই ও বিএইউ অ্যালামোনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া এর ক্রীড়া সম্পাদক, কবীর চৌধুরী রুবেল। মুন্সিয়ানার সাথে আর এক সতীর্থ এর জীবনসঙ্গী, যুঁথি সাহা কে সহযোগি হিসেবে নিয়ে অত্যন্ত মজা আর আনন্দের সাথে পরিচালনা করেন বহু কাঙ্খিত র‍্যাফেল ড্র অনুষ্ঠানটি যা দর্শকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সাড়া ফেলে দেয়। তারপর বাকৃবি অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া এর পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যাঁরা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিন রাত অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে এই মহতী অনুষ্ঠানটিকে সার্থক ও সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যাঁরা এই অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সুসম্পন্ন করার জন্য তাঁদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতার উষ্ণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

এর পরপরই অ্যালামোনাই নুরুন্নাহার সুস্মিতা, জ্যাকি খন্দকার  ও আশরাফীর  সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরই মাঝে শত ব্যস্ততার মাঝেও বাংলাদেশ থেকে এই অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মাননীয় কৃষি মন্ত্রী, ডঃ আব্দুর রাজ্জাক, এম,পি মহোদয় এই মহতী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার জন্য ফোনের মাধ্যমে সংযুক্ত হন। অনুষ্ঠানটির একটু বিরতি ঘটে। তবে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয়ের কথা শুনার জন্য সকল অ্যালামোনাইগণ গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলেন। ছিলেন উদগ্রীব। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তাঁর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বলেন যে, তিনি জানেন যে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি অ্যালামোনাই তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। বাকৃবি'র প্রবাসী অ্যালামোনাইগণ তাঁর আত্মার আত্মীয়, প্রিয় জন। তাই তিনি শুধুমাত্র তাঁর মনের গভীর টানে সকল অ্যালামোনাইদের সাথে ফোনে হলেও সংযুক্ত হয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষি বান্ধব সরকার এর কৃষিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি উন্নয়ন এর অগ্রযাত্রায় এই অর্জন এর পেছনে আজ অবধি বাকৃবি অ্যালামোনাইদের অসামান্য অবদান ও ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। সবাইকে তাঁর বক্তব্য ধৈর্য ধরে শুনার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন কৃতি অ্যালামোনাই এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রী'র শুভেচ্ছা বাণী পেয়ে হল ভর্তি উপস্থিত সকল অ্যালামোনাইগন যেমনি ছিলেন আবেগে আপ্লুত তেমনি ছিলেন মহা খুশি ও উৎফুল্ল। মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয় এর টেলিফোনে কথা শুনে এক মায়াবী আবেগ এর উত্তাপ ছড়িয়ে যায়  উপস্থিত সবার মনে।  

মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয় এর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পরপরই আবার সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফিরে যায়। অ্যালামোনাই পরিবারের সদস্য সদস্যা এবং শিশু শিল্পীদের (তাঁদের সন্তানদের) সমন্বয়ে আবৃত্তি, নাচ, ফ্যাশন শো ও গানের মালঞ্চ দিয়ে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক পর্বটি। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুভ সূচনায় অ্যালামোনাই এসোসিয়েশন এর সদস্যবৃন্দ সমবেত কন্ঠে "পুরানো সেই দিনের কথা" কবি গুরুর এই গানটি পরিবেশন করে সবাইকে যেমনি করেছে আবেগাপ্লুত তেমনি করেছে স্মৃতিকাতর। তারপর একের পর এক চলে গান, আবৃত্তি, নাচ, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা এবং ফ্যাশন শো ইত্যাদি নিয়ে এক অপূর্ব পাঁচ মিশেল পরিবেশনা। সাথে  ছিল স্হানীয় শিল্পীদের নিয়ে গঠিত 'ভবের হাট' নামক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর একক সংগীত পরিবেশনা। তাঁরা সবাই তাঁদের সুরের মূর্ছনায় উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। ছিল মনকাড়া পরিবেশনা। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে অতি সম্প্রতি প্রয়াত উপ-মহাদেশের তিন সঙ্গীত তারকা, কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী যথাক্রমে লতা মঙ্গেশকর, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর বাপ্পী লাহিড়ী'র প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন কৃতি অ্যালামোনাই, ডঃ কাইউম পারভেজ ভাই। সবাই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁদের স্মরণ করেন। পাশাপাশি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রদ্ধেয়া লতা মঙ্গেশকর এর অসামান্য অবদানের কথাও তিনি তুলে ধরেন। পরে তিনি  লতা ও সন্ধ্যাজি'র স্মৃতির উদ্দেশ্যে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের পরপর দুটি গান গেয়ে শুনান। তাঁর এই বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন এর ফলে এই অনুষ্ঠানটিকে অন্য রকম ভাব গাম্ভীর্যের মাত্রা দান করে। এর পর সিডনির তরুণ শিল্পী, কৃতি অ্যালামোনাই, কবীর চৌধুরী রুবেলও নেচে গেয়ে দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। তবে শিশু শিল্পীদের মধ্য কৃতি অ্যালামোনাই সত্য সাহা'র একমাত্র ছেলে, অ্যারন সাহা কবিতা আবৃত্তি করে একজন নবীন বাচিক শিল্পী হিসেবে উপস্থিত সবার কাছে বিশেষ নজর কাড়ে। পাশাপাশি কৃতি অ্যালামোনাই, কবীর চৌধুরী রুবেল এর ছোট্ট মেয়ে, সেঞ্জেলা চৌধুরী তাঁর  সুর, কথা কন্ঠের অপূর্ব গায়কীতে একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করে একজন উদীয়মান শিশু শিল্পী হিসেবে সবার মন জয় করে ফেলে। এক কথায় প্রবীন, নবীন আর নতুন প্রজন্মের সমন্বয়ে এই পাঁচ মিশেলী অপূর্ব পরিবেশনায় মোহমুগ্ধ ছিলেন শ্রোতারা। অতি সহজেই মন কেড়ে নেয় দর্শক শ্রোতার। কিছু সময়ের জন্য মাতিয়ে রাখেন উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের । ফলে সবার আকর্ষণ কেড়ে নেয় মঞ্চ। আবার ছন্দের তালে তালে মঞ্চে নৃত্য পরিবশেষণ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া পরিবারের সদস্যদের প্রিয় সন্তানগণ। আর শেষে কৃতি অ্যালামোনাই হিসেবে কয়েকজন জুটি পরিবার তাঁদের শৈল্পিক ও নান্দনিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ নৃত্যের ঝংকারে দর্শক ও শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন মুহূর্তের মধ্যে। সবাইকে করেছেন বিমুগ্ধ। তাঁরা শুধু নৃত্যই পরিবেশন করেনি বরং "জীবন যে আনন্দময় আর আনন্দময় যে এই পৃথিবী" - সেই অনুভূতিটুকুই চমৎকার ভাবে প্রকাশ করেছেন তাঁদের নৃত্যের তালে তালে। কোন জুটিকে মনে হয়নি তাঁরা নবাগত। ফলে কুড়িয়েছে সবার বিশেষ প্রশংসা। 

সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া এর সকল সদস্যদের আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে গানের সাথে সাথে  বিশেষ সম্মিলিত উউন্মুক্ত নাচ। এক ভিন্ন আমেজে উপস্থিত দর্শক ও অতিথিবৃন্দ  মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে এই দৃষ্টিনন্দন নাচ উপভোগ করেন। বন্ধুত্ব আর প্রাণের টানে মঞ্চে একত্রিত হন সকল অ্যালামোনাইবৃন্দ। সবাই মুহুর্তের মধ্যে হৈ হৈ রৈ  রৈ রবে এই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। সতীর্থদের এই মিলন মেলা ছিল দেখার মত। উপস্থাপক সেলিম এবং উদযাপন কমিটির সদস্য, সত্য সাহা মনে হয় অনুষ্ঠানে আগত অ্যালামোনাইদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই পুরো সময়টি অনুষ্ঠানের ডি,জে কে সময়োপযোগী এবং যথাযথ দিক নির্দেশনা দিয়ে দর্শক শ্রোতাদের নাচিয়ে গাইয়ে মাতোয়ারা করতে পেরেছেন। অগ্রজ ও অনুজ এলামনাই সতীর্থদের নিয়ে আসতে পেরেছেন একসাথে, এক কাতারে । সে এক অপূর্ব দেখার মত দৃশ্য। এক কথায় গান আর নাচের মায়াজালে মন্ত্র মুগ্ধের মতো ভুলিয়ে রাখতে পেরেছেন, গভীর রাত অবধি মাতিয়ে রাখতে পেরেছেন দর্শক শ্রোতাদের। গভীর রাত হলেও সবাই প্রীতির ডোরে বাঁধা পড়ে এক সুখকর অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরেছ। এক অনন্য সুন্দর সন্ধ্যা। 

 বৈকালিক খাবার পরিবেশন এবং নৈশ ভোজে আপ্যায়ন এর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনি এসোসিয়েশন এর সদস্যের আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতা মনে থাকবে সুদীর্ঘদিন। পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোড়দার করতে তাঁদের প্রচেষ্টার বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না যা মনে রাখার মত। বাকৃবি অ্যালামনি এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া এর প্রচার ও প্রকাশনা  সম্পাদক, জনাব জিয়াউল হক বাবলু  সম্পাদনা পরিষদ এর সমন্বয়ক তাঁর পরিষদের সদস্য সচিব, সত্য সাহা আবীর, সদস্য ডঃ কাইউম পারভেজ, নির্মল পাল, ডঃ রতন কুন্ডু, পরমেশ ভট্টাচার্য, আবুল আজাদ এবং ডঃ আসাদুজ্জামান সেলিম কে সাথে নিয়ে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে 'ব্রহ্মপুত্র' নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সবাইকে শুধু তাক লাগিয়ে দেননি, ম্যাগাজিন প্রকাশনার মত দুরূহ কাজটি সম্পাদন করে সবার মাঝে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন। সকল অ্যালামোনাইগন এই ম্যাগাজিন হাতে পেয়ে প্রশংসায় ছিল পঞ্চমুখ। সবাই এই সাধুবাদ জানাচ্ছিল অন্তর থেকে।

পরিশেষে, উন্মুক্ত নাচ আর গানের মাধ্যমেই পরিসমাপ্তি ঘটে "বিএউ অ্যালামনি সন্ধ্যা" অনুষ্ঠানটির। বিএইউ অ্যালামনি এসোসিয়েশন এর এইটিই প্রথম অনুষ্ঠান। সেই হিসেবে একটু আধটু ত্রুটি বিচ্যুতি বাদ দিলে এক স্মরণীয় ও স্মৃতিময় অনুষ্ঠান হিসেবে মনে থাকবে বহুদিন। সাজানো, গোছানো এবং পরিপাটি মনোমুগ্ধকর একটি অনুষ্ঠান যা উপস্থিত সকল মানুষের মন ও প্রাণ ছুঁয়ে গেছে। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2