মধ্যপ্রাচ্য-চীন সম্পর্ক গভীর হচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫৭ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
এ বছরের নভেম্বরের শেষে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘোষণা করেন যে, ব্রিটেন এবং চীনের মধ্যকার সোনালী যুগের অবসান ঘটেছে। তবে, চীন এ খবরে খুব একট ব্যথিত না এবং বিশে^র অন্য কোথাও প্রভাবশালী বন্ধু তৈরিতে ব্যস্ত। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে গঠিত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সাথে বৈঠক করেছেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা ছাড়াও তারা ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং একটি গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন। সউদী আরবে অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ সম্মেলন চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে এবং এ অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাব হ্রাস পাওয়াকে প্রতিফলিত করেছে।
চীনের প্রয়োজন মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমাদানি। আর, উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রয়োজন চীনের গৃহস্থালী সামগ্রী, তৈরি পোষাক, বৈদ্যুতিক পণ্য এবং গাড়িসহ উৎপাদিত পণ্য। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে চীনের প্রবৃদ্ধি তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চীনে তাদের রফতানি বার্ষিক ১৭.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে চীনের অপরিশোধিত তেল আমদানির ৪০ শতাংশই অন্য যেকোনো দেশ বা আঞ্চলিক গোষ্ঠীর তুলনায় উপসাগর থেকে এসেছে, যার ১৭ শতাংশের উৎস সউদী আরব।
২০০৯ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেলের প্রয়োজন হবে। প্রকৃতপক্ষে, চীন ২০১৯ সালেই এ সংখ্যায় পৌঁছে গেছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটির প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেলের প্রয়োজন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে উপসাগরে চীনের রফতানি বার্ষিক ১১.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এবং তারপর ২০২০ সালে ইউরোপিয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে উপসাগরীয় আমদানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। এতে উপসাগরীয় অর্থনীতিগুলোতে ২০২২ সালে প্রায় ৫.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং চীনের রফতানিমুখী অর্থনীতির জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ প্রদান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের সাথে বাণিজ্যের ওপর উপসাগরের ক্রবর্ধমান নির্ভরতার সাথে সাথে পশ্চিমের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব অনুসরণ করার আকাক্সক্ষাটি হ্রাস পেয়েছে। একটি গোষ্ঠী হিসাবে এটি ইরাকে পশ্চিমের সামরিক আগ্রাসন এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি, উপসাগর উল্লেখযোগ্যভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে। এটি সমকামিতা প্রচারের জন্য নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে, আর কাতার ফিফা পুরুষদের বিশ্বকাপে যৌনতার বৈচিত্র্য সমর্থনকারী রংধনু পতাকা সক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তাই চীন-উপসাগর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব আরো শক্তিশালী হওয়ার চিত্র তুলে ধরার জন্য চীনা প্রেসিডেন্টের সউদী আরব সফরটি উপযুক্ত সময়ে ঘটেছে। এবং নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে, উপসাগরীয়-চীনা বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্ক আরো গভীর হতে যাচ্ছে।