দার্জিলিংয়ে আজানের ৩০ সেকেন্ড পূর্বেই থেমে যায় মন্দিরের মাইক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:১৪ পিএম, ২ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:৫৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দার্জিলিং ম্যাল, ম্যালের ওপরের মন্দিরে উঠতে গিয়ে যখন মনে হলো কী দরকার ছিল, উফ আর পারছি না। তারপরেও সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। পথ যেন শেষ হয় না। আমার ধারণা ছিল তৌহিদ ভাই হয়তো আর উঠবে না। তিনিও দেখি আমার চেয়েও উদ্যমী। দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে উঁচুতে এই মন্দির। অবশ্য উঠতে গিয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি সেইসব মানুষদের দেখে যারা পিঠে পাহাড়ি বন থেকে কেটে আনা কাঠখড়ি। সিঁড়ি দিয়ে অর্ধেক ওঠার পর আমরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসলাম।
১৬ জনের দল নিয়ে দুপুরের আগে পৌঁছেছি দার্জিলিং-এ। গতরাতে শিলিগুড়ির একটা হোটেলে থেকে আজকেই চলে এলাম দার্জিলিং। হোটেলে যখন সবাই ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যস্ত আমি আর তৌহিদ ভাই চলে এলাম ম্যালে। ম্যালের কথা পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখায় বহু পড়েছি, কিন্তু জিনিসটা আত্মস্থ হলাম প্রথম। পাহাড়ের ওপর বড় আকারের সমতল জায়গাকে ম্যাল বলে। সবচেয়ে বড় বিষয় বেড়াতে এসে এক মুহূর্ত অলস সময় ব্যয় করার কোনো মানে নেই।
ফের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলাম। এভাবে শেষ পর্যায়ে এসে সিঁড়ি স্মুথ হয়ে যায়। সর্বশেষ চূড়ায় মহাকাল মন্দির। প্রচুর লোকজন আসছে যাচ্ছে। এলাহি কাণ্ড কারখানা। রান্না হচ্ছে, খিঁচুড়ি খাচ্ছে কেউ কেউ। কেউ পূজা দিতে ব্যস্ত। একটানা মাইক বেজে যাচ্ছে। মাইকের এতো সাউন্ড যে অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে। কথিত আছে যে ১৭৮২ সালে এখানে ব্রাহ্ম, বিষ্ণু, মহেশ্বর শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন। মন্দিরের চারপাশ ঘুরে আমরা ফের নামতে শুরু করি। এমন সময় মাইকের শব্দ থেমে গেল। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগতে লাগলো, সুনসান হয়ে গেল চারপাশ।
বিষয়টা বুঝতে ৩০ সেকেন্ডের বেশি লাগলো না। আশেপাশ থেকে জোহরের আজান শুরু হয়ে গেল। খুব অবাক হয়ে গেলাম মসজিদের আজানকে সম্মান জানিয়ে মন্দিরের মাইক বন্ধ হয়ে গেল। এরপরে যখন নীচে এলাম ততক্ষণে আজান শেষ হয়ে গেছে। আজানের সাথে সাথে মন্দিরের মাইকের টাইমিং দারুণ। পরে স্থানীয়দের কাছে শুনলাম এভাবেই নাকি সব ধর্মের মানুষ সবাইকে শ্রদ্ধা করে। পাশেই বৌদ্ধ প্যাগোডা রয়েছে যেটাকে বলা হয় 'পিস প্যাগোডা।' সব ধর্মের অনুসারীরা দার্জিলিং শহরে সহাবস্থানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।
যাইহোক, দার্জিলিং ট্রিপে সবচেয়ে মনে রাখার মতো বিষয় ছিল টাইগার হিল থেকে সুর্যোদয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব রূপ দেখা। এক বিস্ময়কর সুর্যোদয়, সোনায় মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা আমরা বিমোহিত হয়েছি। একদিকে সূর্য ওঠে আর সেই সূর্য পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। সোনার রাঙতায় মোড়ানো কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ বর্ণনা করতে পারেননি বড় বড় লেখকেরা।