ইসরায়েলি নৃশংসতার রোমহর্ষক দৃশ্য : বোমার ধাক্কায় আকাশে মানুষ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ এপ্রিল,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৪:৫৩ পিএম, ৭ এপ্রিল,সোমবার,২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এদিকে, গাজায় বিস্ফোরণের ধাক্কায় মানুষের আকাশে উঠে যাওয়ার রোমহর্ষক দৃশ্য হতবাক করে দিয়েছে বিশ্বকে।
সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, ফিলিস্তিন ভূ-খণ্ডে ইসরায়েলের বোমা এসে আঘাত করে। সেই বোমার বিস্ফোরণের ধাক্কায় বেশ কয়েকজন মানুষকে আকাশে ছিটকে আবার নিচে পড়তে দেখা যায়। যে দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
বিশ্বের অনেক মানুষ সেই ভিডিও শেয়ার দিচ্ছেন এবং কাঁদছেন। কেউ কেউ নিরব প্রতিবাদ করছেন। শিল্পীরা প্রতীকী ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ভাইরাল সেই ভিডিও নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ।
তিনি লিখেছেন, ‘ঝড়ো হাওয়ায় গাছের শুকনো পাতা যেভাবে আকাশে উড়ে যায়, বোমার আঘাতে পবিত্র ভূমির মানুষদেরকে সেভাবে আকাশে উড়তে দেখল বিশ্ববাসী।
পৃথিবীর আটশ কোটি মানুষ, দুইশ কোটি মুসলমান, জাতিসংঘ, ওআইসি, আরববিশ্ব-কেউই হায়েনার হাত থেকে একটি জনপদকে রক্ষা করতে পারল না। বরং সবাই রোমের কলোসিয়ামের গ্যালারিতে বসে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু দেখার মতো যেন উপভোগ করছে এই বর্বরতা।’
তিনি লেখেন, ‘এই বিশ্ব কতটা সভ্য আর মানবিক, তা পরিমাপের সবচেয়ে উপযুক্ত মিটার হলো ফিলিস্তিন। এই নির্মমতার দায় আমাদের সবার। একদিন আমাদের সকলকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘মহান রবের কাছে চাওয়া শুধু একটাই-মৃত্যুর আগে এই জুলুমের শেষ যেন দেখে যেতে পারি।’
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম রাফায় আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শহরের পশ্চিম অংশ রাফায় আবাসিক ভবন ভেঙে ফেলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে তেল আল-সুলতান পাড়ায় সব নিঃশেষ করে ফেলছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তারা গত ২৩ মার্চ থেকে এলাকাটিতে ভয়াবহ সামরিক আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রায় ১৮ মাসে ১৫ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ১৯ হাজার শিশু শহীদ হয়েছে। মা-বাবা হারিয়ে এতিম হয়েছে ৩৯ হাজার শিশু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়মুক্তির কারণে ইসরায়েলি দখলদারেরা ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ করতে আরও উৎসাহী হচ্ছে। ইসরায়েলের অপরাধগুলো তুলে ধরার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে আহ্বান জানায় হামাস।
গাজার মোট ২৩ লাখ বাসিন্দার ৫১ শতাংশ শিশু। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত শিশুদের তথ্য আরও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছে ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাদের তথ্যমতে, গাজায় নিহত শিশুদের মধ্যে ২৭৪টি নবজাতক আর এক বছরের কম বয়সী ৮৭৪ শিশু রয়েছে। হামলার পাশাপাশি উপত্যকাটিতে ঠান্ডায় জমে ১৭ এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ৫২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তখন থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ৫০ হাজার ৬৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত ১ লাখ ১৫ হাজার ২২৫ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে গত ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নিহত ১ হাজার ২৪৯ জন রয়েছেন। এই সময় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২২ জন।