১৮ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ১১:৫১ পিএম, ২২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আগে থেকেই সহযোগিতার ইঙ্গিত দিচ্ছে নয়াদিল্লি। এবার জানা গেলো যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত সব ভারতীয় নাগরিককে চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত মোদি সরকার। এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, আমেরিকা ও ভারত মিলেই এই ১৮,০০০ অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী চিহ্নিত করেছে। যদিও, অবৈধ উদ্বাস্তুর প্রকৃত সংখ্যাটা এর থেকে অনেক বেশি বলে দাবি করেছে ওই সূত্র।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করলেও, আমেরিকায় এখনও অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করা শুরু হয়নি। অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা ছাড়া করার প্রতিশ্রুতি সেই নির্বাচনের প্রচার পর্ব থেকেই দিয়ে আসছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমালা হ্যারিসের বিরুদ্ধে তার চমকপ্রদ জয়ের পেছনেও এটা অন্যতম বড় কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম ভাষণেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন। তার একদিন পরই ১৮,০০০ ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠানোর খবর সামনে এল। নয়াদিল্লিও এই বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে যেতে নারাজ।
সূত্রের খবর, ভারতের আশা এই বিষয়ে ট্রাম্পের পাশে থাকলে, অন্য অনেক দিকে সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছেন, ভারত তা থেকে ছাড় পেতে পারে। ভারত আশা করছে, তাদের সহযোগিতার বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বৈধ পথ যেমন স্টুডেন্ট ভিসা এবং দক্ষ কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচি সুরক্ষিত রাখবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেয়া ৩ লাখ ৮৬ হাজার এইচ-১বি ভিসার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া শিথিল হলে তা ভারতের অন্যান্য দেশের সঙ্গে শ্রমিক ও চলাচল সংক্রান্ত চুক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানা গেছে।
ভারতে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ান, সৌদি আরব, জাপান, ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, "ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন ও চলাচল সংক্রান্ত সহযোগিতার অংশ হিসেবে উভয় পক্ষ অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। এটি ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, ‘অক্টোবর মাসে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর ঘটনাটি এই সহযোগিতার ফল।"মার্কিন কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশন ডেটা অনুসারে, ২০২৪ অর্থবছরে মার্কিন সীমান্তে টহলরত কর্মকর্তাদের দ্বারা সম্মুখীন হওয়া অবৈধ ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় ৩% ।
মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা এবং গুয়াতেমালার মতো ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা অনেক বেশি । সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয়রা সমস্ত অবৈধ ক্রসিংয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী।
ভারত ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা প্রচেষ্টার প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছে, এমনকি বাইডেন প্রশাসনের সাথেও। অক্টোবরে বিশেষ ফ্লাইটে ১০০-এর বেশি ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদির বিদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করার লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে তথাকথিত খালিস্তান আন্দোলন, যা ভারতের মাটিতে পৃথক শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং নতুন প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই ট্রাম্প তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর দৃষ্টি দেন।
তিনি জানান, মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই দেশগুলো ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে’ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। বিশেষ করে কানাডাকে তিনি ‘শোষণকারী’ বলে আখ্যা দেন এবং ফেন্টানিল ও অভিবাসীদের সীমান্ত পেরোনো নিয়ে অভিযোগ তোলেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক নিকানেন সেন্টার জানিয়েছে, যদিও এটি পুরোপুরি পরিষ্কার নয় কেন উত্তর মার্কিন সীমান্ত ভারত থেকে অননুমোদিত অভিবাসীদের জন্য এত বড় প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে।কিছু কারণ হিসেবে ২০২৩ সালে এল সালভাদরে ভারতীয়দের জন্য ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ বন্ধ এবং কানাডায় ভারতের নাগরিকদের তুলনামূলক সহজ যাতায়াতের বিষয়টি উঠে এসেছে।