ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন সেই জাকারিয়া জুবেইদি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৯:২৪ পিএম, ২০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫
যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে ছাড়া পেতে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি বিপ্লবী এবং সশস্ত্র সংগঠন আল-আকসা মার্টার্স ব্রিগেডের সাবেক কমান্ডার জাকারিয়া মুহাম্মদ আব্দেলরহমান জুবেইদি। ফিলিস্তিনের জেনিন শহরের লড়াকু বীর খ্যাত জুবেইদি বন্দি মুক্তির প্রথম ধাপে রোববার ছাড়া পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে টাইমস অব ইসরায়েল।
শনিবার জেরুজালেম পোস্টসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুবেইদি মুক্তি পেলেও তিনি নিজ দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
অনলাইনে প্রকাশিত হিব্রু তালিকায় বলা হয়েছে, জুবেইদিকে বিদেশে পাঠানো হবে না। তাকে উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিনে ফিরে যেতে দেওয়া হবে, যেখানে তিনি ফাতাহর আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন।
জুবেইদি ২০০১ সালের শেষের দিকে সশস্ত্র আন্দোলনে ঝুঁকে পড়েন যখন তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ইসরায়েলি সেনারা হত্যা করে। ২০০২ সালে, দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় জাকারিয়ার মা সামিরা এবং ভাই তাহাকে হত্যা করে ইসরায়েলি স্নাইপাররা। তাদের বাড়ি, স্টোন থিয়েটারসহ এবং ক্যাম্পের বেশিরভাগ অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি ২০০৪ সালের জুন মাসে তেল আবিবে একটি বোমা হামলার দায় স্বীকার করেন, যাতে একজন নারী নিহত হন এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হন।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে জুবেইদি ঘোষণা করেন জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে সমের সাদি এবং অন্য দুই যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর তার গ্রুপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেছে। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোষণা করে তারা জুবেইদিকে ফাতাহর আল-আকসা-ব্রিগেডের যোদ্ধাদের জন্য দেওয়া সাধারণ ক্ষমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে। ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ সালে ইসরায়েল জুবেইদির ক্ষমা প্রত্যাহার করে। পরে অবশ্য মাহমুদ আব্বাসের সরকার তাকে গ্রেফতার করেছিল। কয়েক বছর তিনি জেল খাটেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে জুবেইদিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি সামরিক। দেশটির আদালতে পশ্চিম তীরে বেসামরিক বাসে গুলিবর্ষণ করার জন্য তাকে অভিযুক্ত করে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জুবেইদিকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত গিলবোয়া কারাগারে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালিয়েছিলেন জুবেইদিসহ ছয় ফিলিস্তিনি, যা তখন সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলে। ফিলিস্তিনিরা যে কারাগারের কক্ষটিতে থাকতেন সেটির বাথরুমে চামচ দিয়ে গর্ত খুঁড়ে ওই সুড়ঙ্গটি তৈরি করেন, যার শেষ মাথা ছিল জেলের ঠিক বাইরে একটি মাটির রাস্তায়। অবশ্য পাঁচ দিন পরে, ১১ সেপ্টেম্বর কেফার তাভোর গ্রামে তারা ধরা পড়েন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ গত বছর জুবেইদির ছেলে মোহাম্মদকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করে।
জাকারিয়া ১৯৭৬ সালে জেনিন শরণার্থী শিবিরে মোহাম্মদ এবং সামিরা জুবেইদির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারটি মূলত সিজারিয়ার নিকটবর্তী একটি গ্রাম থেকে এসেছিল। ১৯৪৭-১৯৪৯ সালের ফিলিস্তিন যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। একজন ব্রিটিশ প্রতিবেদকের সঙ্গে একটি বিরল সাক্ষাত্কারে জাকারিয়া জানান, তার বাবা একজন ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকের শেষদিকে ফাতাহের সদস্য হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি সেনারা।
ফ্রিডম থিয়েটার ও জাকারিয়া জুবেইদি
পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের জেনিনে জেনিন শরণার্থী শিবিরের ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়-ভিত্তিক থিয়েটার এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ফ্রিডম থিয়েটারের অন্যতম কারিগর জাকারিয়া জুবেইদি। ১৯৮০’র দশকে মির খামিস জেনিন শরণার্থী শিবিরে বেশ কয়েকটি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল "স্টোন থিয়েটার"। এর ছাত্র ছিলেন জাকারিয়া। ২০০২ সালে জেনিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বুলডোজার এটি ধ্বংস করে দেয়। সেসময় মির খামিসের কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। এর কয়েক বছর পর স্টোন থিয়েটারের প্রাক্তন ছাত্র জাকারিয়া জুবেইদি গড়ে তুলেন ফ্রিডম থিয়েটার। এতে সহযোগিতা করেন সুইডিশ অ্যাক্টিভিস্ট জোনাথন স্ট্যানজ্যাক।
ফিলিস্তিনিদের কাছে জাকারিয়া জুবেইদি একজন বীর, একজন শিল্পী একজন বিপ্লবী। যিনি কবিতা, সংগীত, থিয়েটার, ক্যামেরা দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের মুক্তির সংগ্রামে যোগদানে উৎসাহ দিতেন।