গাজায় শিক্ষা হলো প্রতিরোধের রূপ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:২৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
গত ২৯ জুলাই ফিলিস্তিনের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন তাওজিহি উচ্চবিদ্যালয়ের সাধারণ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে, তখন সারা কেঁদে ফেলে। ১৮ বছর বয়সী এই মেয়েটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের অন্যান্য শিক্ষার্থীর আনন্দ উদ্যাপন দেখেছে, যারা তাদের কৃতিত্বে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল।
গাজায় তার তাঁবু পরিদর্শনে গেলে দেখতে পাই সারা কাঁদছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে সে আমাকে বলে, ‘আমারও তো এই সময়ে আনন্দ করার কথা ছিল, স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে উদ্যাপন করার কথা ছিল, কিন্তু তা আর হলো না। আমি সেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা এবং এ জন্য আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে এমন স্বপ্ন দেখেছিলাম।’
সারা গাজা শহরের জাহরাত আল-মাদাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিল এবং ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সে কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। কারণ পরীক্ষায় ভালো ফল করলে সে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে পড়ার জন্য আবেদন করার অনুমতি পেত। এই পরীক্ষার স্কোর হলো ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রধান মাপকাঠি।
এখন এসবের পরিবর্তে সারা হতাশা নিয়ে তার সময় কাটাচ্ছে। কারণ ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ তাদের বাড়ি ধ্বংস করার পাশাপাশি তার উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্নও ধ্বংস করেছে। সারা গাজার ৩৯ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর একজন, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পারেনি। তবে সারা হলো সেই সব ‘ভাগ্যবান’-এর একজন, যারা বোমা হামলায় এখনো মারা যায়নি। ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ২৬০ জনের বেশি শিক্ষকসহ বিভিন্ন গ্রেডের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মারা গেছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুলগুলোয় সম্ভবত এই উচ্চবিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, গাজায় শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের স্থানগুলোকে মৃত্যুস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই মাস থেকে গাজার বিভিন্ন স্কুলে ২১ বার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং এসব হামলায় ব্যাপক হতাহত হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় গাজা শহরের আল-তাবিন স্কুলটি ১০০ জনের বেশি লোকের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের শনাক্ত করতে পারেননি, কারণ বোমা তাদের দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল।
জাতিসংঘের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ৫৬০টি স্কুলের ৯৩ শতাংশ হয় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩৪০টি হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি চালিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পাশাপাশি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলো রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজার স্কুলগুলো টার্গেট করছে এবং এর পেছনে একটা কারণ আছে।
ইসরায়েল এখন যা করছে তা হচ্ছে, পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের এই রূপকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি, জ্ঞান, ইতিহাস, পরিচয় এবং মূল্যবোধ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ এবং ভাগ করে নেওয়ার উপায়গুলো নির্মূল করার জন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিচ্ছে। ইসরায়েলের গাজার স্কুল ধ্বংস করার অর্থ হলো শিক্ষার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের চেতনা নস্যাৎ করা।