নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া ক্রমে কঠিন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ জুন,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:০২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগের চেয়ে বেশি সময় কর্মহীন কাটাতে হচ্ছে মার্কিন নাগরিকদের। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া দিনে দিনে অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে দেশটির শ্রমবিভাগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির শ্লথতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিটির শ্রমবাজারে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের এখনই কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদহার কমালে বিনিয়োগ বেড়ে এ পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। খবর সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমবাজারে নতুন চাকরি কমে যাওয়া প্রভাব পড়ছে বেকার ভাতার আবেদনে। বিশেষ করে একাধিক সপ্তাহ বেকারত্ব সুবিধা ভোগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকে এ ধরনের সুবিধাকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে।
দেশটিতে নতুন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে সর্বশেষ এ ডাটায় উঠে এসেছে। এ তথ্যে বেকার ভাতার আবেদন ক্রমেই বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। ১৫ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহের শুরুতে সাতদিন বা তার বেশি সময় ধরে বেকার ভাতা পেয়ে আসছেন সপ্তাহের শুরুতে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ২১ হাজার। কিন্তু সপ্তাহ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৯ হাজার জনে। অর্থাৎ এক সপ্তাহ বা বেশি সময় ভাতা পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার।
তবে পরবর্তী সপ্তাহে প্রথমবারের মতো বেকার ভাতার আবেদন সামান্য কমে আসে। ২২ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে ২ লাখ ৩৩ হাজার প্রাথমিক আবেদন পায় শ্রম বিভাগ, যা আগের সপ্তাহের ২ লাখ ৩৯ হাজার থেকে ছয় হাজার কম। কিন্তু এখনো প্রথমবারের মতো আবেদনকারীর সংখ্যা প্রাক-মহামারী স্তরের কাছাকাছি। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ চার সপ্তাহের গড়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার দাবি লিপিবদ্ধ করেছে শ্রম বিভাগ, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ।
সাপ্তাহিক ডাটাগুলো সাধারণত ছাঁটাইয়ের কারণে প্রভাবিত হয়। তাই পরবর্তী সময়ে সংশোধিত আকারে প্রকাশ হয়। তা সত্ত্বেও বেকারত্বের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী বলে সম্প্রতি জানান গবেষণা প্রতিষ্ঠা প্যানথিওন ম্যাক্রোইকোনমিকসের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ইয়ান শেফার্ডসন।
তিনি জানান, নিয়োগ সংস্থা চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাসের মাসিক চাকরির প্রতিবেদন এবং ফেডারেল ও রাজ্যস্তরে গণছাঁটাই বিজ্ঞপ্তি বোঝায়—বেকার ভাতার প্রাথমিক দাবি এ গ্রীষ্মে আরো বাড়তে থাকবে।
জুলাইয়ে সাধারণ অটো কারখানা বন্ধ থাকে। শ্রমবাজারসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোয় এর প্রভাব পড়ে বলে ইয়ান শেফার্ডসন বলেন, ‘এটি বেকার দাবিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত না করেই সংখ্যার তারতম্য ঘটাতে পারে। কিন্তু বিবেচনায় রাখতে হবে যে কোম্পানিগুলো যখন আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, তারা প্রায়ই বিদ্যমান কর্মীদের ছাঁটাই করার পরিবর্তে নতুন নিয়োগে লাগাম টানতে শুরু করে। এ পদ্ধতি বর্তমান নিয়োগের সূচকগুলোয় প্রতিফলিত হয়, যা চাকরির বাজারের অবস্থার ভবিষ্যৎ পতন বা খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়। সেক্ষেত্রে এখন বেকার ভাতার দাবির বৃদ্ধি নাও দেখাতে পারে। কিন্তু অন্য লক্ষণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে শিগগিরই কর্মসংস্থানের অবস্থার অবনতি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের সূচকগুলো আগামী তিন মাসে চাকরি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ধীরগতির দিকে নির্দেশ করে, যা সম্ভবত ১০ লাখের নিচে থাকবে।’
শ্রমবাজারের এ স্থবিরতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ও সুদহারজনিত টানাপড়নকে টেনে আনেন ইয়ান শেফার্ডসন। বর্তমানে দেশটিতে সুদহার ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি অর্থপূর্ণভাবে ধীর হলেই সুদহার কমানো হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা, যা শ্রমবাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
এ অর্থনীতিবিদ জানান, সুদহারের এ ধরনের গতিপথ বেকারত্বের হারকে আরো বাড়িয়ে দেবে। ফেডারেল রিজার্ভকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ মাস ধরে বেকারত্বের হার ৪ শতাংশের নিচে ছিল। এরপর মে মাসে সে হার বেড়ে ৪ শতাংশে পৌঁছে এবং নতুন চাকরির সংখ্যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে যায়। বেকারত্বের কারণে ভোক্তা ব্যয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপি প্রতিবেদনেও তা আরো স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক ভোক্তা ব্যয় বছরের প্রথম তিন মাসে মন্থর হয়েছে। বর্তমান শ্রমবাজারে পরিস্থিতি ভোক্তা ব্যয় আরো কমার আশঙ্কা তৈরি করেছে।