গাজায় অসহায় মানুষের বাঁচার আকুতি, নিহত ৯০৬১
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:১৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে আর বেশি বাকী নেই। ইতোমধ্যে সব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলী বাহিনী। তাদের নির্বিচারে বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ মাটির সাথে মিশে গেছে। সঙ্গে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে হাসপাতাল, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা। এখন সেখানে শুধুই হাহাকার। অসহায় মানুষের বাঁচার আকুতি। এর মধ্যে নতুন করে শুরু করেছে স্হল হামলা। এই হামলার পরিণতি হলো গাজার সবকিছুকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া। এই হামলা চালালে গাজা কবরস্থানে পরিণত হবে বলে অনেকে মত দিয়েছেন।
গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০৬১ জন। এ সংখ্যা শুধু যেসব মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাদের। এর বাইরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেক মানুষ। তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। ফলে গাজা যেন এক গণকবরে রূপ নিয়েছে। তার ওপর ইসরাইলি সেনারা গাজা সিটিতে সমবেত হয়েছে। তারা ঘিরে রেখেছে ওই শহর। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ইসরাইলি সেনাদের মুখপাত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। দখলিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে তাদের অভিযানে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে চারজন ফিলিস্তিনি।
গাজায় বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি কম করা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান নিয়ে আলোচনা করতে ইসরাইলের পথে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ৭ই অক্টোবর থেকে এটা হতে যাচ্ছে তার ইসরাইলে তৃতীয় সফর। ওদিকে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদ ইসরাইলকে ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার বিল পাস করেছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। অনেকেই বলছেন, তারা যেভাবে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে, হাসপাতাল-স্কুলে হামলা করছে, তাতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এমনকি তারা যুদ্ধাপরাধ করছে বলে গণ্য করা যায়। এ অবস্থায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক। তিনি স্মরণ করেছেন যে, ইসরাইলে তার দূত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছেন, ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তিনি বলেন, হামাস যে হামলা করেছে তার পক্ষেও সাফাই গাওয়া যায় না। এ বিষয়ে নিন্দা জানানো উচিত। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যা করছে তার সুস্পষ্ট নিন্দা জানাতে হবে। গাজায় অবস্থিত আল কুদস হাসপাতালের চারপাশে নতুন করে আকাশ থেকে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গাজা সিটির পশ্চিমে তাল আল-হাওয়া এলাকায় এই হাসপাতালটি অবস্থিত। ইসরাইলের বিমান হামলায় বার বার এই হাসপাতালকে হুমকি দেখানো হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বর্তমানে ওই হাসপাতালে অবস্থান করছেন বাস্তুচ্যুত ১৪০০০ ফিলিস্তিনি। তার মধ্যে আছেন আহত ও অসুস্থ রোগী। যদি সেখানে হামলা চালানো হয়, তাহলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বেআইনি এবং তাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
ওদিকে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে টার্গেট করে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে অনেকে হতাহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদেরকে নেয়া হচ্ছে গাজা সিটিতে অবস্থিত আল শিফা হাসপাতালে। বুরেইজ এবং নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছেন। তাদেরকে নেয়া হয়েছ আল আকসা মার্টিরস হাসপাতালে। দখলিকৃত পশ্চিমতীরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৮।
ওদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের সন্ধানে গাজার ওপর দিয়ে নজরদারিকারি ড্রোন উড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে। তাদের একজন বলেছেন, কমপক্ষে এক সপ্তাহ ধরে তারা ড্রোন উড়াচ্ছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় হামাসের হাতে কমপক্ষে ২০০ মানুষ জিম্মি আছেন। এখনও সন্ধান মিলছে না ১০ জন মার্কিনির। তারা ওই জিম্মিদের মধ্যে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জিম্মিদেরকে হামাস তাদের ভূগর্ভস্থ টানেলে আটকে রেখেছে।