‘যুদ্ধের কোন ধর্ম নেই’, খ্রিষ্টান-মুসলমান একই ছাদের নিচে!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:০৪ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ইসরায়েলের বিমান হামলায় যখন ওয়ালা সোবেহের বাড়ি এবং বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংস হয়ে যায় তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজার প্রাচীনতম এক গির্জায়। সেন্ট পোরফিরিয়াসের চার্চে তিনি কেবল অভয়ারণ্যই খুঁজে পাননি বরং সেখানে খ্রিষ্টানদের সঙ্গে মিলেমিশে ‘এক পরিবার’ হয়েছিলেন। অবিরাম বোমাবর্ষণ আর ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে বাঁচতেই মূলত তারা একত্র হয়েছেন।
পরে ওয়ালা সোবেহে উত্তর গাজার অন্যান্য আত্মীয়দেরও টেলিফোন করেন এবং তাদেরও গির্জায় যেতে বলেন। সোবেহ এবং তার পরিবারসহ আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন ওই গির্জায়। তবে তারা বিভিন্ন ধর্মের এবং বিশ্বাসের অধিকারী। ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও এখন তারা একই ছাদের নিচে, নিরাপদে অবস্থান করছেন এক পরিবার হয়ে।
এমন এক সময়ে হামাস-ইসরায়েল সংঘাত আরম্ভ হয়েছে যখন পুরো বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ার উত্থান ঘটেছে। আর সেখানে গ্রীক অর্থোডক্স গির্জা ফিলিস্তিনিদের গভীর পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত গির্জাটি ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সেন্ট পোরফিরিয়াসের চার্চের ফাদার ইলিয়াস বলেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা করেছে। এটা নিশ্চিত না যে, ইসরায়েল গির্জায় বোমাবর্ষণ করবে না। যদিও এটি শত শত বেসামরিক লোকদের আশ্রয়স্থল।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনারা বেশ কয়েকটি মসজিদ এবং স্কুলে আঘাত করেছে। বেসামরিক লোকদের বাড়িঘর উড়িয়ে দিয়েছে। ফাদার ইলিয়াস বলেন, গির্জার ওপর যে কোন আক্রমণ শুধু ধর্মের ওপর আক্রমণ নয়, এটি মানবতার ওপর আক্রমণ। এটি জঘন্য কাজ। তিনি বলেন, আমাদের ধর্ম সবাইকে শান্তি এবং উষ্ণতার আহ্বান জানায়।
সান্ত্বনার জায়গা
সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চ হল গাজা শহরের একটি গ্রীক অর্থোডক্স খ্রিষ্টান চার্চ। গাজার ওল্ড সিটির জায়তুন কোয়ার্টারে অবস্থিত, এটি গাজার পঞ্চম শতাব্দীর বিশপ সেন্ট পোরফিরিয়াসের নামে নামকরণ করা হয়েছে , যার সমাধি গির্জার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
সেন্ট পোরফিরিয়াসের চার্চের মূল নির্মাণ ৪২৫ সিই তবে আধুনিক নির্মাণ ক্রুসেডাররা ১১৫০ বা ১১৬০ এর দশকে শুরু করেছিল এবং তারা এটি সেন্ট পোরফিরিয়াসকে উৎসর্গ করেছিল। আর এই গির্জাটি মূলত গাজার ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন প্রজন্মের জন্য ভয়ের সময় সান্ত্বনা প্রদান করেছে।
এমনকি ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ, শিশুদের ক্রন্দনরত অশ্রুতে যখন পুরো গাজা ভাসছে তখনও এই গির্জায় প্রার্থনা আর স্তোত্রে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আশা। ফাদার ইলিয়াস বলেন, গির্জার এই উঠোন মুসলমান এবং খ্রিষ্টান উভয়কেই একইভাবে আশ্রয় দেয়। যেমন ‘যুদ্ধ কোন ধর্ম জানে না।’
এদিকে গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছে। ধসে পড়েছে শত শত বাড়ি ও ভবন। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। হাসপাতালে লাশের সারি। আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, ফুরিয়ে আসছে খাবার। ২২ লাখ মানুষের নগরী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন এই পরিস্থিতি। টানা এগারো দিন সেখানে অবিরাম আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৮০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের ৬৪ শতাংশই নারী ও শিশু।