জেলেই কি শেষ ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ আগস্ট,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:২৯ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি আলাদা। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৩ বছরের জন্য কারাগারে তিনি। এতে করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে জনমনে। ইমরান খানের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে! কি অপেক্ষা করছে ইমরান খানের জন্য?
চলতি বছরের ৯ মে এবং ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হন তিনি। খুব বেশি সময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার না হলেও প্রথমবার গ্রেপ্তারের দৃশ্য ও প্রেক্ষাপট এবারের থেকে খুবই আলাদা। গতবার গ্রেপ্তার হলেও তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা পাকিস্তানে বিক্ষোভ করে, জ্বালাও-পোড়াও করে অশান্ত হয়ে উঠে। এমনকি সেনাবাহিনীর অবকাঠামোতে আগুন দেয়। কিন্তু এবারের গ্রেপ্তারের পর খুব স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। কোথাও জোরালো আন্দোলন বা বিক্ষোভ দেখা যায়নি।
বর্তমানে ইমরান খানকে পাঞ্জাবের অ্যাটক কারাগারে রাখা হয়েছে। ইমরান পাকিস্তানের প্রথম সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রী, যাকে এই ‘কুখ্যাত’ কারাগারে রাখা হলো। তাকে তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতিচর্চার’ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। আদালত একই সঙ্গে ইমরান খানকে এক লাখ রুপি জরিমানা করেছেন। বিচারক বলেছেন, ইমরান খান নির্বাচন কমিশনে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। দুর্নীতিচর্চায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের করা এ মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাওয়া উপহার রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা না দিয়ে বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সক্রিয় রাজনীতিতে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আগামী নির্বাচনে কি ঘটতে যাচ্ছে ইমরানের ভাগ্যে? নির্বাচনের আগে এমন প্রেক্ষাপট জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্নের।
গ্রেপ্তারের আগে ইমরান খান শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ডাক দেন। কিন্তু এর প্রেক্ষিতে কোন জোরালো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অবশ্য গ্রেপ্তারের আগে সমর্থকদের ঘরে চুপচাপ বসে না থেকে এই সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ডাক দেন ইমরান খান। কিন্তু এই ডাকের প্রতিফলন দেখা যায়নি রাজপথে। প্রশ্ন উঠছে- কেন এমনটা হলো? তাহলে কি ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কমে গেল? নাকি পূর্বের সহিংসতার কারণে পাকিস্তানের জনগণ ইমরান খান বা তার দল পিটিআইকে আর সমর্থন করতে চাইছেন না।
এদিকে অনেক বছর ধরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশ্বাস ছিল দেশের জন্য একজন ‘ত্রাতা’ খুঁজে পেয়েছে তারা। এ ত্রাতা হলেন ইমরান খান। কিন্তু লেখক ও সাংবাদিক মোহাম্মদ হানিফ লিখেছেন, ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার এক বছরের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, সেই ইমরান খানই সেনাবাহিনীর ‘চিরশত্রু’ হয়ে উঠছেন। ইমরানের আক্রোশ থেকে বাঁচতে সেনাবাহিনীও সর্বশক্তি ব্যবহার করছে। ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধরপাকড় ও সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এতে পুরো পাকিস্তানই স্থবির হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
গতবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পরে সেনানিবাসে সহিংসতা করে। তার দলের কর্মী ও সমর্থকেরা সেই সেনা সদর দপ্তরে ঢুকে, সেনাবাহিনীর পতাকাসংবলিত সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছিল। লাহোরে সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেলের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়। জেনারেলের বাড়ির আসবাব ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় ইমরান খানের সমর্থকদের।
এদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষমতা হারানো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। তার মেয়ে বেনজির ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে দুবার অপসারণ করা হয়। পরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। হামলাকারী ছিল একজন কিশোর। সে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত কখনো হয়নি। আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও অপসারণ করা হয়েছিল। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন, পরে নির্বাসিত হন। এখনো বিদেশে আছেন। নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তার মাধ্যমে নওয়াজই কার্যত দেশ চালালেও তিনি এখনো পাকিস্তানে ফিরতে পারেননি।
টেলিভিশন ও পত্রিকায় ইমরান খানের সংবাদ প্রচারেও বিধিনিষেধ রয়েছে। গত মাসে দেশটির মিডিয়ার মালিকরা সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার নাম প্রকাশ হচ্ছে না। এদিকে সরকার বিবিসিকে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হেনস্তা করবে না তারা। কিন্তু গত শনিবার লাহোরে ইমরান খানের বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। মামলা দেওয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, সেদিন অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘আমি মনে করি, কঠোর দমন-পীড়ন অভিযান ইমরান খানের সমর্থকদের মাঝে চরম ভীতি ছড়িয়েছে।'
সবমিলিয়ে এই প্রেক্ষাপটে ইমরান খান জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকেও কিছু বলা হয়নি। ফলে এখনকার পরিস্থিতিতে অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ইমরান খানের।