অভূতপূর্ব সাড়া জাগালো অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় কুরআন প্রতিযোগিতায়
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জুন,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গত ৩ জুন শনিবার অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্যের কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা থেকে শীর্ষ তিন বিজয়ী শিশুকিশোরদেরকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি বিশেষ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গত রমজান মাসে গোটা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রায় দেড় হাজার ক্ষুদে কুরআন তেলাওয়াতকারির অংশগ্রহণে অনন্য একটি কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাসব্যাপী জমকাল এই প্রতিযোগিতা অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্য, নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরিতে অনুষ্ঠিত হয়। এবং গত শনিবার এই ছয়টি রাজ্যের প্রতিযোগিতাগুলোতে যে সমস্ত শিশুকিশোর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে তাদেরকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার কুরআন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, আল-তাজকিরাহ ইন্সটিটিউট, সেখানকার শীর্ষস্থানীয় ইসলামি সংগঠন ইসলামিক প্র্যাকটিস ও দাওয়াহ সার্কেল (আইপিডিসি) -এর সহায়তায় এই মহিমান্বিত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
ধর্মীয় পবিত্রতা, প্রশান্ত ও ভক্তি পূর্ণ এক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সিডনির ব্যাঙ্কসটাউনের ব্রায়ান-ব্রাউন থিয়েটারে জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় আঠার জন প্রতিযোগী শিশু-কিশোরদের কুরআন তেলাওয়াত উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। প্রতিযোগিতায় বিচারকদের সম্মানিত প্যানেলে ছিলেন আল বায়ান ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শেখ তারেক আল বিকাই, প্যারামাটা মসজিদের ইমাম শেখ মুসাদ ইসা, এবং মুহজিরিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, শেখ আদিদ আল রুবাই।
প্রতিযোগিতার শেষে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিভার স্বীকৃতি ও সমৃদ্ধ ইসলামী ঐতিহ্যকে স্মরণ করার মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিলের সভাপতি শেখ শাদি আলসুলেমান, আল-তাজকিরাহ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি শেখ আবু হুরায়রা, আইপিডিসির সহসভাপতি ইঞ্জি. মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ড. মনিরুজ্জামান, বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধি, আল-তাজকিরাহ ইন্সটিউটের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ এবং সমাজের অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দুহাজার তেইশ সালের এই জাতীয় কুরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় নিউ সাউথ ওয়েলসের ইব্রাহিম খেরকাহ । তার ত্রুটিহীন সুললিত তেলাওয়াত বিচারকদের মুগ্ধ করে। ইব্রাহিমকে পবিত্র কুরআন শিক্ষায় তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে তিন হাজার ডলার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার আয়েশা মোহাম্মদ আবদিরহমান অসাধারণ প্রতিভা এবং কুরআনের সাথে গভীর সংযোগ প্রদর্শন করে সুন্দর কোরআন তেলাওয়াতের জন্য দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় তার অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ আয়েশাকে দুই হাজার ডলার পুরষ্কার দেওয়া হয়। হাফসাহ মোহাম্মদ নালীম, ভিক্টোরিয়া থেকে উড়ে এসে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে । তার তেলাওয়াত বিচারক ও দর্শকদের বিমোহিত করে। হাফসাকে তার নিষ্ঠা ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এক হাজার ডলার পুরষ্কার দেওয়া হয়।
অংশগ্রহণকারীদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেবার পাশাপাশি আয়োজকরা প্রতিযোগীদের পিতামাতাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। পিতামাতাদের অটল সমর্থন ও প্রচেষ্টা সন্তানের কুরআন শিক্ষার প্রতি মননিবেশ, কুরআনের প্রতি ভালবাসা এবং এর তেলাওয়াতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে আয়োজক ও বিচারকরা উল্লেখ করেন।
শুধুমাত্র প্রতিযোগীদের ব্যক্তিগত অর্জনই নয় এই প্রতিযোগিতা মুসলমানদের জীবনে কুরআনের ব্যাপক তাৎপর্য ও কুরআনের প্রতি গভীর অনুরক্তিকেও ফুটিয়ে তুলেছে । এই প্রতিযোগিতা অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও আধ্যাত্মিকতাকে উৎসাহিত করে কুরআনকে বোঝার এবং পালন করার গুরুত্বকে সবার সামনে তুলে ধরেছে।
অনুষ্ঠান শেষে আইপিডিসি এনএসডব্লিউ-এর সভাপতি জনাব মাহমুদ আলম আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন এবং সারা দেশে আইপিডিসি এবং আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউটের সাথে একত্রে কাজ করার জন্য দর্শকদের অনুরোধ করেন। সবশেষে আল তাজকিরাহ ইনস্টিটিউট এর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্যাম্পাসের প্রিন্সিপাল শেখ আব্দুর রহমান সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।