তৈরি পোশাকশিল্পের ১৫-২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ অন্যত্র যাওয়ার শঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ আগস্ট,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৩৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সপ্তাহে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো পুরোদমে উৎপাদনে ফিরেছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানিও স্বাভাবিক হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতা প্রতিনিধিরা পুনরায় নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন। স্থগিত থাকা ক্রয়াদেশও কমবেশি আসছে।
ব্যবসায় গতি ফিরতে শুরু করায় তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে তাঁরা বলছেন, ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও পরবর্তী ঘটনার প্রভাবে আগামী মৌসুমের ১৫-২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ অন্য দেশে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে ক্রেতাদের বার্তা দেওয়া দরকার। এ ছাড়া বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি ও ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের কারখানায় গ্রীষ্ম মৌসুমের পোশাক বেশি তৈরি হয়। অধিকাংশ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই মৌসুমের ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়া জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সম্পন্ন করে থাকে। এসব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদন শেষে নভেম্বর থেকে রপ্তানি শুরু হয়।
গ্রীষ্মকালীন পোশাকের ক্রয়াদেশ দেওয়ার সময়কাল বিবেচনায় আগামী দুই সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলো ক্রয়াদেশের অনুসন্ধানে জর্জরিত। নমুনা পোশাক তৈরি ও উৎপাদন ব্যয় নিরূপণের কাজ চলছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অনেক ক্রয়াদেশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে ব্র্যান্ডগুলো। এই সময়ের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশের ওপর বহির্বিশ্বের আস্থা তৈরি হয়। অন্যথায় ক্রেতারা অনিশ্চয়তায় ভুগবে। তাতে ক্রয়াদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন মধ্য জুলাইয়ে সহিংস আকার ধারণ করে। পরে সংঘাত আরও বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চার দিন (১৯-২২ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তখন চার থেকে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর কারখানা চালু হয়। পরে ৪ আগস্ট থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করলে আবার সহিংসতা শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় কারখানার উৎপাদন আবার বন্ধ হয়ে যায়।
পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, প্রথম দফায় কারখানার উৎপাদন ও পণ্য জাহাজীকরণের সঙ্গে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কয়েক দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ওই সময় ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। উল্টো সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারায় কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষকে মূল্যছাড় ও উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর মতো ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রয়াদেশ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে আবার আলোচনাও শুরু হয়েছে। তবে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমের ১৫-২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ ইতিমধ্যে অন্যত্র চলে গেছে বা যাবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’ বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ বলেন, ‘এক মাস আগে ৪-৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমাদের বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ক্রেতারা তখন বলেছেন, এত বড় একটা দেশে এমনটা কীভাবে হয়। ক্রয়াদেশে সেটার একটা প্রতিফলন থাকতে পারে। সব মিলিয়ে আমাদের ধারণা আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ কমার হার ১০ শতাংশের নিচে থাকবে।