avertisements 2

বাংলাদেশের মন্দ ঋণ: 'শীর্ষ ১০ গ্রহীতা ঋণ খেলাপী হলেই ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে'

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৩ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:১৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কাজে অনিয়ম দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ব্যবসায়িক প্রভাবের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে টিআইবি বলেছে।

বাংলাদেশে এক দশকের প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯৫০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি'র এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, দেশের এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণ খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে।

টিআইবি'র গবেষণা অনুযায়ী, হাতেগোনা কয়েকজনের কাছেই রয়েছে বড় অংকের ঋণের টাকা। একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে কৌশলে বা যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে।

সংস্থাটির গবেষণায় পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসাবে বর্ননা করে এজন্য সিণ্ডিকেট, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়িক প্রভাব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিকে অন্যতম কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে।

সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, নৈরাজ্য, ঋণ জালিয়াতি এবং খেলাপি ঋণের উচ্চহার চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং খাতের তদারকি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার। গবেষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায় নিয়েও ১০দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির পরিস্থিতির পিছনে আইনের দূর্বলতাগুলোকেও গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে।

একক ব্যক্তি বা গ্রুপ কোন একটি ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে পারবে- তা ঋণ সীমা নীতিমালায় বলা আছে। কিন্তু একক ব্যক্তি বা গ্রুপ একাধিক ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে - সেটা আইনে না থাকায় মোটা অংকের ঋণ নিয়ে খেলাপী হওয়ার বিষয়টি এসেছে গবেষণায়।

সংস্থাটি বলেছে, যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় একটা টোকেন অর্থ ফেরত দিয়ে ঋণ পুন:তফসিলীকরণ করার পর পুনরায় ঋণ খেলাপি হয়েছে তাদের নামও প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে খেলাপি ঋণের মাত্র দুই শতাংশ ফেরত দিয়ে ঋণ পুন:তফসিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১০ বছরের জন্য। এরপর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়েছিল। এ ধরণের পদক্ষেপ ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কারণ বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

নির্বাচনের সময় টোকেন অর্থ ফেরত দিয়ে প্রার্থী হিসাবে বৈধ হওয়ারও সুযোগ দেয়া হয়।

ঋণ খেলাপি, বাংলাদেশ।
তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়িক প্রভাব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহিতার ঘাটতি ও তদারকিতে অনিয়ম দুর্নীতিকে বড় কারণ হিসাবে উঠে এসেছে টিআইবি'র গবেষণায়।

সেখানে আইনের সীমাবদ্ধতার কথাও এসেছে।

সংস্থাটি বলেছে, একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এরপর এই শক্তি তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সিণ্ডিকেট তৈরি করে এবং মোটা অংকের ঋণ নিয়ে থাকে।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ব্যবসায়ী অংশ প্রভাব খাটিয়ে আইন পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। টিআইবি গবেষণায় এমন চিত্র পেয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির জন্য আইনী কাঠামোতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

টিআইবি তাদের গবেষণায় ব্যাংকিং খাতে সঙস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির পুরো ক্ষমতা দেয়াসহ মোট ছয়টি সুপারিশ করেছে টিআইবি।

টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, "ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে চলে এসেছে।"

তিনি জানিয়েছেন, "সরকারি হিসাব এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে হিসাবে দেখা যাচ্ছে তিন লক্ষ কোটি টাকার মতো ঋণ খেলাপি হয়েছে। এটি বিশাল অংক। ব্যাংকিং খাতে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে এই বোঝা জনগণের ওপরই পড়বে।"

তবে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এই বক্তব্য মানতে রাজি নন।

তিনি বলেছেন, "খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে। সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সমস্যাটা আছে। কিন্তু খাদের কিনারে চলে গেছে- এমন কথা ঠিক নয়। সমস্যা আছে, কিন্তু ভয়াবহ পরিস্থিতি নয়।"

টিআইবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে।

তবে ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি নন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, "আমার কাছে পরিসংখ্যান যা বলছে, তাতে ঋণের ক্ল্যাসিফিকেশন কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে এবং যে জনবল আছে, তা দিয়ে যে দায়িত্ব পালন করার কথা, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথভাবে করছে। তার প্রমাণ ঋণের ক্ল্যাসিফিকেশন কমেছে।"

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2