avertisements 2

মেঘনাপাড়ে সন্তান প্রসব করালেন ঘুরতে আসা তিন চিকিৎসক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ পিএম, ৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫

Text

গত বুধবার (২৫ মে) রাত ১১ টার দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা থেকে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে বেতুয়া ঘাটে আসে মুক্তা নামের এক প্রসূতি। এ সময় নদীপাড়েই তার সন্তান প্রসব করান চিকিৎসকরা। এমন মানবিকতায় প্রশংসায় ভাসছেন তিন চিকিৎসক। ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদীর তীরে এক ব্যতিক্রমী মানবিক ঘটনার জন্ম দিলেন তিন এই চিকিৎসক।

মেঘনার ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে মুক্তাকে বহনকারী বোটটি যখন চরফ্যাশনের বেতুয়া প্রশান্তি পার্কের কাছে পৌঁছায় তখন রাত ১১ টা ১০ মিনিট। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘাটে পৌঁছা মুক্তা ততক্ষণে প্রায় অচেতন। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় মুক্তা আর তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ। অথচ তাদের যাওয়ার কথা ছিল চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে যান স্বজনরা।

স্বর্গীয় দূত হিসেবে হাজির হন চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক। অথচ এমন ঘটনার সাক্ষী হবেন তারা কল্পনাও করেননি। সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে প্রশান্তির খোঁজে বেতুয়ার মেঘনা পাড়ের খোলা রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন, ডা. ফাইয়াজ ও ডা. নাহিদ হাসান। বেতুয়া পার্কের মেঘনার ভাসমান চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তারা। খাবারও চলে এসেছিল টেবিলে। এমন সময় সেখানে একজন গর্ভবতী মাসহ তার পরিবারের তিনজনকে নিয়ে একটি স্পিডবোট ভেড়ে। প্রসূতি মা তখন মাটিতে বসে প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন।

এদিকে, মায়ের কান্নাকাটি শুনে পার্কে আসা লোকজনের কেউ কেউ এগিয়ে যান। তখন প্রশান্তির খোঁজে আসা তিন চিকিৎসকও এগিয়ে আসেন প্রসূতি মায়ের সেবায়। ডা. সুরাইয়া তাৎক্ষণিক রোগীকে পরীক্ষা করেন। জীবন-মৃ ত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মায়ের প্রসব করান মেঘনা পাড়েই। মুক্তা-সবুজ দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে এক কন্যা সন্তান। শঙ্কা কাটিয়ে হাসি ফোটে স্বজনদের মধ্যে।

ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, স্পিডবোট ঘাটে ভেড়ার পরই সিঁড়িতে বসে পড়েছেন মা। কাছে গিয়ে দেখলাম ভয় ঙ্কর অবস্থা। নবজাতকের মাথা বের হয়ে গেছে। সহকর্মী দুই চিকিৎসক নাহিদ হাসান ও ফাইয়াজকে নিয়ে দুই-এক মিনিটের পরামর্শ শেষে ব্লেড-সুতাসহ কিছু জরুরি উপকরণ পাশের দোকান থেকে সংগ্রহ করে বেড়িবাধেঁর ওপর কাপড়ের প্রাচীর দিয়ে সন্তান প্রসব করালাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে। এ এক অনন্য দৃশ্য। প্রতিকূল পরিবেশে বিজয়ের আনন্দ। নিজেকে তখন খুব সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে।’

ডা. নাহিদ হাসান বলেন, এমন একটি কাজে সম্পৃক্ত হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এটাই আমাদের কাজ। কখনো ভাবিনি গভীর রাতে মেঘনার উত্তাল ঢেউ আছড়েপড়া কূলে একজন অসহায় মা আর তার নবজাতকের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারব। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে নিরাপদভাবেই স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2