মারা গেলেন যৌতুকের আগুনে পোড়া সেই সাদিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩২ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
'চাহিদামতো যৌতুকের দাবি' পূরণ না করায় কুমিল্লার দেবীদ্বারে স্বামীর দেওয়া পেট্রলের আগুনে পোড়া সেই সাদিয়া মারা গেছেন। একসপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি। সাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, আজ ভোর পৌনে ৫টায় সাদিয়া মারা যান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাদিয়ার ময়নাতদন্ত শেষে দেবীদ্বার উপজেলার পদ্মকোটে জানাজার পর দাফন করা হবে।
যৌতুকের দাবি মিটিয়েই দুই বছর আগে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম (নুরু) সরকারের ছেলে আসাদ সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় সাদিয়ার। নিহত সাদিয়া একই উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের মো. ফরিদুল আলম সরকারের মেয়ে।
পরিবারের অভিযোগ, ঈদের আগে আরো পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসাদ। টাকা দিতে না পারায় গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়ার ভাড়া বাসায় সাদিয়ার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন আসাদ। গুরুতর দগ্ধ সাদিয়াকে প্রথমে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে দ্রুত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি একসপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শনিবার ভোর পৌনে ৫টায় মারা যান।
এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সাদিয়া আক্তার হত্যায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
ওই ঘটনায় সাদিয়ার বাবা ফরিদুল আলম অপুল সরকারের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত স্বামী আসাদ সরকারকে গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতেই আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবীদ্বার থানা পুলিশের ওসি মো. আরিফুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপিল) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাদিয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, 'আমার স্বামী আমাকে এর আগেও কয়েকবার বলেছেন যে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবে। গত ৫ মাস ধরে যৌতুকের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই শুধু বলত, বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়।
টাকা না দেওয়ায় আমার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আমার স্বামী। আমি আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আমাকে বাধা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। ' সাদিয়ার স্বামী দেবীদ্বার সদর বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদসংলগ্ন একটি ওয়ার্কশপের দোকানদারি করত। ব্যবসার সুবাদে ওই এলাকায় সে ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় সাদিয়াকে আগুনে পুড়িয়েছিল।
আহত সাদিয়া পাঁচদিন অচেতন ছিলেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লেকজন বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে। অবশেষে সাদিয়ার জ্ঞান ফিরে এলে ভিডিও বার্তায় যৌতুকের টাকার জন্য তাঁকে পেট্রলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার সত্যতা প্রকাশ পায়।
সাদিয়ার মা সামসুন্নাহার জানান, স্বামীর শত আঘাত সহ্য করেও তার মেয়ে তাদের কাছে নির্যাতনের কথা প্রকাশ করত না। আমার মেয়ে হেরে গেল। প্রশাসনের কাছে অভিযুক্ত আসাদ সরকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।