avertisements 2

প্রতারণা মামলায় জামিন নিতে আদালতে স্কুলছাত্র চয়ন!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৪ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন। সহপাঠীরা যখন বিদ্যালয়ের ক্লাস করছে, সে সময়ে চয়ন তার মা ও মামার হাত ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের একটি মামলায় ৮ বছর বয়সী চয়নকেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে। আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। 

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) চয়ন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে শিশু চয়ন এবং তার ১৭ বছর বয়সী বোন তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন। এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়।

চয়নের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মাসুম তালুকদার মারা যাওয়ার পর জনৈক মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে এ বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর। প্রকৃতপক্ষে জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী চয়নের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৩। এ ছাড়া চয়নের বোন তুলাতলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইমরোজ তৃপ্তির বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া চয়নের মা, দাদীসহ ওই মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা হাজির হন। বুধবার আসামী শিশু চয়ন এবং তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মইনুল হক তাৎক্ষণিকভাবে আসামি শিশু চয়ন এবং তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করে এবং বাদীর পক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মোহসীন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে তিনি আদালতে কথা বলবেন বলে জানান। পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

শিশু চয়নসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয় চয়নের পিতা মরহুম মাসুম তালুকদার কলাপাড়া উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় ১২ একর জমি বিক্রি করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা নিলেও মৃত মাসুম তালুকদার জমির দলিল প্রদান করেনি। এর প্রেক্ষিতে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের মামলাটি দায়ের করা হয়। বাদী মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৮নং ওয়ার্ডের টাইন কালিকাপুর এলাকার (মিরাজ ভবন) বাসিন্দা, তার পিতার নাম রব হাওলাদার।

এদিকে শিশু চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের হয়রানি এবং জমি জমা দখলের লক্ষ্যেই এই ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2