avertisements 2

‘পিঠা বিক্রি করেই ‘ঢাকায়’ জমি কিনেছেন রাশিদা!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১৫ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

হাজারো স্বপ্ন নিয়ে প্র’তি’নি’য়’ত অগনিত মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। প্রতিটি জীবনযুদ্ধই একটা কাঙ্ক্ষিত ফ’লা’ফ’ল সামনে রেখে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিয়ে একটু ভালো থাকা। তার ওপর যদি রাজধানীর বুকে এক টুকরো থাকার জা’য়’গা করে নেয়া যায়, তবে স্বপ্ন ও তার বাস্তবায়ন যেন সোনায় সোহাগা। প্রবল ইচ্ছা, ধৈর্য, পরিশ্রম থাকলে জীবনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁ’ছা’নো অসম্ভব কিছু নয়।

সুখ পাখিটা কখনোই হাতছাড়া হবে না, সঙ্গে যদি থাকে সততা। এমন হা’জা’রো গল্পের ভিড়ে একটু একটু করে নিজের জীবনের গল্পটা সাজিয়েছেন রাশিদা বেগম। ম’গ’বা’জা’রে রেললাইনের পাশেই পিঠা বিক্রি করে রাজধানীর বুকে কিনেছেন এক টুকরো জমি। সেই সঙ্গে সন্তানদেরও করাচ্ছেন লেখাপড়া।

জী’ব’ন’যু’দ্ধে তার একমাত্র সঙ্গী ছিলেন স্বামী। একটা সময় রিকশা চালালেও স্বামী-স্ত্রী দু’জ’নে’র’ই পরিশ্রমে এখন তার স্বামী একজন ক্ষুদ্র ফার্নিচার ব্যবসায়ী। দীর্ঘ কিংবা স্বল্প যেকোনো ভাবেই সংজ্ঞায়িত হোক না কেন, র’জ’ধা’নী’র বুকে এক টুকরো থাকার জায়গা করতে তার পরিশ্রমটা ১১ বছরের। মালিবাগ মোড় থেকে রে’ল’লা’ই’ন ধরে মগবাজারের দিকে দুই মিনিট হাঁটলেই বাম পাশে দেখা মিলবে রাশিদা বেগমের। বিকেল ৫টায় দোকান খোলেন, বন্ধ ক’রে’ন রাত ৯টা সাড়ে ৯টার মধ্যে।

এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টা’কা’র পিঠা বিক্রি করেন তিনি। রাশিদা বেগমের পিঠার দোকানের সামনে গেলেই দেখা যায়, তিনটি মাটির চুলার মধ্যে একটিতে ভাপা পিঠা ও অন্য দু’টি’তে চিতই পিঠা বানাচ্ছেন। প্রতিটি ভাপা ১০ টাকা ও চিতই পিঠার দাম ৫ টাকা। চিতই পি’ঠা’র সঙ্গে আছে সরিষা বাটা ও ধনেপাতার সঙ্গে মরিচ বাটা। বেশিরভাগ সময়ই একাই পিঠা বিক্রি করেন। ছোট্ট মেয়েটাকেও সঙ্গে করে আ’নে’ন। মায়ের পাশে বসেই খেলা করে সে। অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া বড় ছেলে মাঝে মাঝে এসে মাকে স’হ’যো’গি’তা করে। দ্বীতিয় শ্রেণিপড়ুয়া ছোট ছেলে মায়ের পাশে এসে মাঝে মাঝে বসে থাকে।

রাশিদা বে’গ’মে’র সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। কত বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘বিয়ার পরপরই পিঠা বিক্রি শুরু ক’র’ছি। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে খাটাখাটি শুরু করি। আমার স্বামীর আগে একটা রিকশা ছিল। দু’জ’নে’র পরিশ্রমে এখন তার একটা ছোট ফার্নিচারের দোকান আছে। আমিও গত ১১ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করছি।’ এত পরিশ্রম করে কী ক’রে’ছে’ন জানতে চাইলে রাশিদার উত্তর, ‘কষ্ট করে পয়সা জমাইছি। ১১ বছর পিঠা বিক্রি করে আ’ফ’তা’ব নগরে ৯ লাখ টাকা দিয়া একটা দেড় কাঠার প্লট কিনছি।

এত কষ্ট করে জমি কি’ন’লে’ন, বাড়ি করবেন কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লায় যহন তৌফিক দিব, তহন বাড়ি করুম। টাকা উপার্জনের পাশাপাশি নি’জে’র সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতিও যথেষ্ট সচেতন রাশিদা। বড় ছেলে মগবাজার বিটিসিএল আ’ই’ডি’য়া’ল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ক্লাসে তার রোল ৪। স্কুল থেকে ফিরে মাকে পিঠা বিক্রিতে স’হ’যো’গি’তা করে। দ্বিতীয় সন্তানও ছেলে। তাকে ভর্তি করেছেন মগবাজারের একটি মাদরাসায়। ছোট মেয়েটা এখনও স্কুলে ভর্তি করার বয়স হয়নি। কী’ভা’বে সংসার সামাল দিচ্ছেন জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘সকালে বড়টারে স্কুলে ও মে’জ’টা’রে মাদরাসায় দিয়া আসি। ছুটি হলে একাই বাসায় আসে।

সন্ধ্যায় আমি দোকান করি। তখন একটু কষ্ট হইলেও সন্তানরা বাসায় এ’কা’ই থাকে। মাঝে মাঝে দোকানেও নিয়া আসি। আমার সংসারে কোনো অশান্তি নাই। সংসারটা আ’মা’র নিজের মতো করে গইড়া নিছি। এ শহরে এত মানুষের মধ্যে নিজেকে কেমন মনে হয় জানতে চাইলে রাশিদার সরল উত্তর, ‘আমি স’ব’চে’য়ে ভালো আছি। অনেক ভালো আছি। আল্লাহপাক অনেক ভালো রাখছেন। স’বা’ই যদি পরিশ্রম করে, হালাল টাকা উপার্জন করে, তাইলে সবার পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব পিঠা বিক্রির পাশাপাশি বেশ পরিপাটিও তিনি। দো’কা’নে’র সামনে দিয়ে যখন প্রতিবারই ট্রেন যাতায়াত করে, কাপড় দিয়ে পিঠাগুলো ঢেকে দেন রা’শি’দা। আবার ট্রেন চলে গেলে কাপড় সরিয়ে ফেলেন।

এভাবেই কিছুক্ষণ পর পর ট্রেন আসলে তাকে কাপড় দিয়ে পিঠাগুলো ঢাকতে হয়। কি’ছু’ক্ষ’ণ পর পরই এমন বাড়তি পরিশ্রম কেন করেন প্রশ্ন করলে রাশিদা বলেন, ‘ট্রেন যখন দো’কা’নে’র সামনে দিয়া যায়, তখন খুব ধুলা উড়ে। এজন্য কাপড় দিয়ে ঢাইকা দেই। আমার কাস্টমাররাও দেখে আমি তাদের ময়লা পিঠা খাওয়াই না। রা’শি’দা’র গ্রামের বাড়ি বরিশালে। মালিবাগ থেকে রেললাইন ঘেঁষে ম’গ’বা’জা’রে’র দিকে হাঁটতে থাকলে আশপাশে অনেক ঘুঁপচি ঘড় চোখে পড়বে। তার মধ্যে কোনো একটি ঘরেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন রা’শি’দা। ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে এ’ক’স’ঙ্গে পরিশ্রম শুরু করেন। রাজধানীর বুকে এক টুকরো জমি কিনতে পেরে এখন খুবই খুশি তিনি। সেই সঙ্গে স্বামীরও এখন একটা ব্য’ব’সা আছে। ঢাকায় একটু জমি আছে, এখন কেমন লাগছে জানতে চাইলে রাশিদার উত্তর- ‘আ’শা’ই তো করি নাই কোনো দিন কিছু করমু। প্রতিদিন বিকেলে পিঠার দোকান খোলেন রাশিদা। স্বপ্ন, নিজের পরিশ্রমে কেনা জমির ওপর ছোট্ট এ’ক’টি বাড়িও করতে চান তিনি। সেই সঙ্গে সন্তানদেরও গড়তে চান মানুষের মতো মানুষ হিসেবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2