দুই হাতের কব্জী দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় মোবারক আলী!

শারীরিক প্রতিবন্ধী জন্ম থেকে দুই হাতের কজ্বি ছিল না মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তার অভিভাবক। কি হবে তাকে দিয়ে । সমাজের বোঝা ,না অভাবি সংসারের ঝামেলা । মোবারক আলী ক্রমান্বয় বড় হলে মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না । বিচলিত হলেও ভেঙ্গে পড়েননি তিনি । এই দম্পত্তির সাহস স্কুল মুখি করে দুই হাতের কজ্বি একখানে দিয়ে খাতায় লেখার কৌশল শিখানো হত তাকে । স্কুলে ভর্তি পর লড়াই করেন অন্যান্য ছাত্রদের সাথে । এ ভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সে । ২০১৮ জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
 
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ওই কব্জী একত্রে করে খাতায় উত্তর পত্র লেখে দিচ্ছেন অদম্য মেধাবী মোবারক আলী। দুটি হাতের আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতই পরীক্ষা দিচ্ছেন সে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। জন্মের পর থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে উঠে। তার দুটো হাত অচল হলেও কখনও দমেনি এ লড়াকু সৈনিকের লেখা পড়া । শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন এবারো।

সোমবার সকালে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসাবে গণিত বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে । তার রোল নম্বর ২১৫৭৭৩। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়তি সময় লাগেনা তার। অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হল ত্যাগ করছেন।

মোবারক আলী মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। সে নিজের কাজ গুলো প্রায় সব নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তার পড়ে তাকে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।

মোবারক আরী জানান, হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ঠ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে । আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভাল রেজাল্ট করে বাবা-মা সহ শিক্ষকদের মুখ উজ্বল করতে পারি ।

কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক প্রতিবন্ধি হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি সে ভাল ফলাফল করবে।