avertisements 2

মাদক কারবারিদের মূল টার্গেট শিক্ষার্থীরা, ইংরেজি মাধ্যম এগিয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ অক্টোবর, বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:১৪ এএম, ৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

প্রতীকী ছবি

রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোর অলিগলি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের মাদক। শিক্ষার্থীরা মাদক কারবারিদের মূল টার্গেট। তাদের মধ্যে আর রাখঢাক নেই। ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র-ছাত্রীরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে।

অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে মাদকের ব্যবহার। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘ সময়ের অচলাবস্থা এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বলা হচ্ছে, মাদকের চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যতটা নজর, ততটা নেই সরবরাহের দিকে। সরবরাহ চলছে প্রায় অবাধে।


মাদক কারবারিদের মূল টার্গেট শিক্ষার্থীরাপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আবারও শুরু হয়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। ফলে কিছু মাদক কারবারি ধরাও পড়ছে । সম্প্রতি অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধেও যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশ।

এ ছাড়া চলতি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে মাদকবিরোধী ব্যাপক অভিযান। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে টিম গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তরুণীদের মধ্যেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের ভয় না থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন অনেকে। অতীতে মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা, জরিমানা ও গ্রেপ্তার করেও মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা কমানো যায়নি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ডোপ টেস্ট করে চাকরিতে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর—এসব প্রতিষ্ঠানের কেউই এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা অস্বীকার করছে না।


বিশেষজ্ঞরা জানান, মাদক সেবনের কারণে বদমেজাজ, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, অসংলগ্ন ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, ভুলে যাওয়া, দুর্বলচিত্ততা, হতাশা ইত্যাদি মানসিক বিকারের শিকার হয় মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা। এ ছাড়া মাদকসেবীদের মধ্যে শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি স্ট্রোকের হার সর্বাধিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক নিয়ে গবেষণাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন. ‘মাদকের দুটি সাইড রয়েছে—ডিমান্ড ও সাপ্লাই সাইড। এর মধ্যে বেশি কাজ করা হয় ডিমান্ড সাইড নিয়ে। আমি মনে করি সাপ্লাই সাইড নিয়ে বেশি কাজ করা দরকার।’

হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী থানাগুলোতে হামলা চালানো হয়। এর পর থেকে বেশ কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই সুযোগে সারা দেশে মাদক কারবারিদের উৎসব শুরু হয়।

সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পসহ রাজধানীর বড় স্পটগুলো একসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় পরিচালিত হতো। পটপরিবর্তনের পর নতুন করে ক্যাম্পের মাদকের বাজার নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্তত চারটি গ্রুপ সক্রিয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বছরে অন্তত দেড় শ কোটি টাকার মাদক বিক্রি হয় জেনেভা ক্যাম্পে। মাদক জব্দের জন্য গতকাল মঙ্গলবার আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সাল হাসান কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।’

শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে রাজধানীর অলিগলিসহ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন করছে। ক্যাম্পাসেই মিলছে স্বল্পমূল্যে মাদক। স্থানীয় মাদক কারবারিরাও কৌশলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্যাথেডিন, সিসা, এলএসডির মতো মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রীদের মধ্যেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। রাজধানীর একটি কলেজের একজন শিক্ষিকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা আগের মতো সম্মান দেখায় না। আমাদের সামনেই সিগারেট, গাঁজা টানতে শুরু করে দেয়। কিছু বলাও যায় না। কিছু বললে অপমানিত হতে হয়।’

মাদক কারবারে যুক্ত নারীরাও 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদক কারবারে রাজধানীসহ সারা দেশে নারীরাও যুক্ত। মাদকের গডফাদাররা নারীদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই কারবারে তাদের জড়ানোর সুযোগ পায়। ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নারীদের একাধিক দল সক্রিয়। গত সোমবার রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে ‘মাদকসম্রাজ্ঞী’ লাভলী ওরফে লাবনীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় লাবনীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় অন্তত ১১ নারীর নাম রয়েছে মাদক কারবারি হিসেবে, যারা ‘মাদকসম্রাজ্ঞী’ হিসেবে পরিচিত। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে তিন নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, একবার এই কারবারে জড়িয়ে পড়লে সহজে বের হওয়া যায় না।

শুরু হচ্ছে ব্যাপক অভিযান

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে অক্টোবরের মাঝামাঝি শুরু হচ্ছে ব্যাপক অভিযান। ওই সময় দেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে মাদকের ছড়াছড়ি না হতে পারে, সে বিষয়ে কাজ করবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। গত রবিবার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে তিনজন নারী মাদক কারবারি ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদক রোধে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2