মাধবী-৭৬
মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৩ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ঢাকার রাজপথ
৭ নভেম্বর ২০২২
মাধবী,
কাক ডাকা ভোর কিংবা পাতা ঝরা সন্ধ্যায় তোমার ঝরে যাওয়ার স্মৃতিরা ঘুরেফিরে আসে ফ্ল্যাসব্যাকে ! তখন মনে হয় - চোখ কেড়েছে চোখ, উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক ! ইদানিং সাঁঝের আলোয় মেঘে ঢাকা তাঁরার ফাঁকে চারিদিকে গন্ধ বিধুর ধুপের ঘ্রাণ পাই, তোমাকে প্রগাঢ় ভালোবাসায় অনুভব করি ! এমনই এক সন্ধ্যায় হয়তো জীবনানন্দ তাঁর নাটোরের বনলতাকে লিখেছিলো-
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের
শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে;
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে
পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির
রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী
ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি
বসিবার বনলতা সেন।
মাধবী,
বাংলাদেশের রাজনীতির বন্ধুর সময় পার করছি আমরা । রাজনীতি হল রক্তপাতহীন যুদ্ধ, আর যুদ্ধ হলো রক্তপাতময় রাজনীতি !! কখনো কখনো রক্তপাতহীন যুদ্ধও রক্তপাতময় হয়, বাংলাদেশের ৫০ বছরের জীবনে সেই রাজনীতি বহুবার ঘটেছে ! আজ ৭ নভেম্বর, সেই বহু ঘটে যাওয়া ঘটনার অন্যতম একটি দিন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির দিন, বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার দিন, মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবার দিন ! এই দিনে অংশগ্রহনকারী সকল সৈনিক জনতাকে অভিবাদন ! ৭ নভেম্বরের অন্যতম অর্জন ছিলো বাংলাদেশে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, সে অর্জন ম্লান হয়ে যায় এরশাদের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার রক্তপাতময় হয়ে উঠে । আর সেই রক্তপাতময় রাজনীতিতে ‘৮২-‘৯০ সাল পর্যন্ত আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা, কান্চন, রাউফুন বসুনিয়া, শাহজাহান সিরাজ, জিহাদ, নূর হোসেন, আসাদ আহমেদ মুন্না, ডাঃ শামসুল আলম মিলনসহ অসংখ্য সহযোদ্ধাদের । আজও আমরা রক্তপাতময় রাজনীতির অন্ধগলির চোরাবালিতে হারিয়ে আছি ।
মাধবী,
তোমাকে লেখা চিঠি বুকের বাম পাশে রাখি, আলো আঁধারের উত্তাপ দেই যাতে খড়খড়া, মচমচে থাকে, ভোঁতা না হয়ে যায় ! তোমার ভেতরটাকে প্রতিদিন অনুভব করি। নিজেকে নিঃস্ব করে যে ভালোবাসা তোমার জন্য দিয়েছি, সেই ভালোবাসা বহু পাথর হৃদয়ে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা জাগায়, ঈর্ষান্বিত করে। নিন্দুকেরা বলে, আমি ‘মাধবী' তেই মুগ্ধ, মাধবীতেই বুঁদ হয়ে থাকি ! তোমার পাগল পাগল স্পর্শ, অধরে অধর- কণ্ঠলগ্ন প্রেম, ভেসে যাওয়া, মাতাল হাওয়ায় চুল উড়িয়ে নেওয়ার মত অতটা ভালোবাসা আমার জন্য নয় ! অতখানি সমর্পণ, অতটা প্রণতি চেয়েছিলাম! অথচ তুমি দিলে এক বুক কষ্ট, অতটা দহন যন্ত্রণা আর আর এক সমুদ্র বিশ্বীসহীনতা ! এই বিশ্বাসহীনতার জীবন নিয়ে ভালো আছো তো মাধবী?
মাধবী,
রুদ্র গোস্বামীর ইচ্ছের মত মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝেই এরকম হয়, চোখ খুলতেই তোমাকে মনে পড়ে। অথচ মনে পড়ার মতো আরও কতকিছু আছে! এ পৃথিবীতে ভাবার বিষয় একমাত্র তুমি হয়ে উঠেছো ! মাঝেমাঝে মনে হয় শুধু তোমাকে ভেবেই কাটিয়ে দিতে পারি এ জীবনের সবকটা রাত।
রুদ্র গোস্বামীর মত মনে হয়-
তোমাকে দেখার নেশা পৃথিবীর সব
মদকে ম্লান করে দেয় অরুণিমা।
বেলিফুল মালা খোঁপায় বেঁধে
তুমি এমন সামনে এসে দাঁড়াও!
শুভ স কা ল