avertisements 2

মাধবী - ৭২

মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ১১ মার্চ,সোমবার,২০২৪

Text

২৩- ২৫ অক্টোবর, ২০২২

নিউইয়র্ক -মিলান- দুবাই- ঢাকা ফ্লাইট

মাধবী,
 বাংলাদেশের নিকট অতীতের স্মৃতি হাতড়ে ফিরছি, বাংলাদেশের ডিফ্যাক্টো সরকারের সমস্বরে কোরাস গাওয়ার একটা স্মৃতি পেলাম, যেখানে তারা গেয়েছিলো, ‘বিদ্যুতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, প্রয়োজনে রপ্তানিও করা হবে’ । মমতাজ বেগম তো রীতিমত সংসদে বিদ্যুত নিয়ে গানও গেয়ে ফেলেছিলেন । আজ সেই বিদ্যুৎ কোথায় গেলো ? বিদ্যুতের হাহাকারে সোস্যাল মিডিয়ায় জনরোষ দেখছি ! ডিফ্যাক্টো সরকারের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ইতিমধ্যেই বলেছেন, প্রয়োজনে দিনে বিদ্যুৎ ব্যাবহার না করার শপথ নেবেন। সম্প্রতি ডিফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়াতে দেখলাম, জনগনকে ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি জালানোর বিকল্প বাতলে দেওয়া হয়েছে, এমনকি দূর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতিও নিতে বলা হয়েছে ! কি অদ্ভুত এক উঠের পিঠে চড়ে চলেছে আমাদের স্বদেশ ! আমেরিকার প্রিসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ আলী রিয়াজ বলেছেন, দেশে বিরাজমান এ পরিস্থিতির পিছনে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা দায়ী ! এতকিছুর পরও বীর জনতা সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে । বিএনপি সহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে অভিন্ন রাজনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন যার মধ্যে অন্যতম হলো-  গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুশাসন- ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, দূর্নিতীর অবসান, খুন গুম সহ মানবাধিকার লংঘনের বিচার, নিত্যপন্যের লাগামহীন মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি !

মাধবী,
বাংলাদেশ  এখন শুন্য শুন্য, নেই নেই, আর মিথ্যার বেসাতিতে ভরে গেছে । এই ধরো, রিজার্ভ শূন্য, গনতন্ত্র শূন্য, ভোট শূন্য, সভ্যতা ভব্যতা শুন্য, রাজনীতিকদের জন্য ন্যায় বিচার শূন্য ! আবার ধরো ডলার নেই, বিদ্যুৎ নেই, গনতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, শান্তি নেই, স্বস্তি নেই ! এত  এত শূন্যতা আর নেই এর মাঝেও বাংলাদেশে রোগ বালাই আছে, দৈব দূর্বিপাক আছে, অপশাসন- দুঃশাসন আছে, স্বৈরতন্ত্র কিংবা নৈরাজ্যবাদ আছে, দূর্নিতীবাজ- চাপাবাজ আছে, ভন্ড নেতা আছে, মিথ্যাবাদী শাসক আছে, আর হৃদয়হীন-বিশ্বাসহীন মানুষ আছে ! তাও তো কিছু আছে, এটাই বা কম কি বলো ? এটাকেই বলে ‘something is better than nothing’ ! উপরের বলা এতগুলো উপমা ‘আছে’ বলেই এদেশের মানুষ সংগ্রামী হয়, সৃষ্টিশীল হয়, প্রতিবাদী হয়, অগনিত অসংখ্য মানুষ সংগ্রামের কষ্টি পাথরে শাণীত হয়ে যুগের পরিক্রমায় বীর প্রমিথিউস হতে চায়, প্রত্যয়দীপ্ত ভাবে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ফিনিক্স পাখির মত জেগে উঠে !! বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের গনতন্ত্র যোদ্ধারা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযাদ্ধা হওয়ার স্বপ্নে রাতভর রাজপথ দখলে রাখে ! তাঁদের স্বপ্নের জোয়ারে ভেসে যায় সব বাধা বিপত্তি, অগনিত বিশ্বাসহীনদের আস্থানা বালুর বাঁধে পরিনত হয় !

মাধবী,
তোমাকে এবং তোমার পাঠকদের একটা অন্য ধরনের গল্প বলি, কানাডার আদালতের সমন বা নোটিশ জারির গল্প । এবার কানাডায় গেলাম, সেখানে বন্ধু ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান স্বাতী এবং তাঁর স্বামী ইমামুল হক, আমাদের অনেকের ইমাম ভাই কিংবা একতেদাইতুল বেহাজাল ইমাম গল্পটা করলেন ! অনেক গল্প কথার মাঝে কানাডায় আদালতের নোটিশ জারীর পদ্ধতি সম্পর্কে ছোট্ট একটি পদ্ধতি বললো ! সেখানে আদালত থেকে পিওন নোটিশ নিয়ে কারও উপর জারি করতে গেলে সে যদি নিতে অস্বীকার করে তবে, জারিকারক বা পিওন নোটিশ প্রাপককে জাপ্টিয়ে ধরে তার গায়ে  নোটিশটি কোন রকম ছোঁয়ালেই নোটিশ জারী কমপ্লিট ! পিওন জারি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে বলে যে সে প্রাপকের গায়ে নোটিসটি ছুঁইয়ে দিয়েছেন । সেটাই বৈধ, সেটাই আইনসিদ্ধ ! আমাদের এখানে অবশ্য লটকিয়ে কিংবা ঢাকঢোল পিটিয়ে নোটিশ জারীর বিধান আছে ! কানাডার এই সিস্টেমে আমি পুলকিত ! তাই লিখলাম তোমাদের জন্য ! 
মাধবী,
আমাদের কিছু কথা  বাকী ছিলো না, আমাদের কিছু অনুভূতি, কিছু আকাংখা, কিছু বেদনার্ত অতীত এখন শুধুই স্মৃতি । তোমাকে মনে পড়ে, আটলান্টিক কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের এপার ওপারে ! যেখানেই যাই, আরব সাগর কিংবা ভূমধ্য সাগর- যেখানেই তাকাই, তুমি ঘুরে ফিরে স্মৃতির এলবাম নিয়ে স্বপ্নের ফেরিওয়ালার মত হাজির হও !! এ কারনেইতো বলি, ভল্গা না হোক, পদ্মার মৌনতায় তুমি অনন্যা, ফুলের উপমা ফুলই যে শুধু, তোমার উপমা তুমিই শুধু ! 

মাধবী,
অস্থির মনে তোমাকে এই লেখা একবারে লিখতে পারিনি ! প্রায় তেত্রিশ হাজার ফুট উপরে একহাজার কিলোমিটার গতিতে এমিরেট্স এয়ার লাইন্স যখন যাত্রা শুরু করে তখন নিউইয়র্কে ২৩ অক্টোবর রাত দশটা, যখন লেখা শেষ করে ২৫ অক্টোবর সকাল ৮ঃ৪০ মিনিটে ঢাকায় ল্যান্ড করলাম তখন বিধ্বস্ত, ক্লান্ত ! ইতিমধ্যে ইতালীর মিলান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এয়ারপোর্টে যাত্রা বিরতি করেছি ! যাত্রাকালে চে’ গুয়েভারার উপর নির্মিত একটি সিনেমাসহ কয়েকটি সিনেমা দেখলাম, ইউটিউবে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনলাম——ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো, ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়, রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যে ছিলো আমার স্বপনও চারিনী…..ইত্যাদি ইত্যাদি……….!

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2