avertisements 2

মাধবী-৭১

মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪৮ এএম, ৮ মার্চ,শুক্রবার,২০২৪

Text

মাধবী, 
পশ্চিমা বিশ্বে  এসে ‘মাধবী’র গোটা কয়েক পাঠক পেলাম যারা নিয়মিত ‘মাধবী’ পড়ে, মাধবীকে লেখা শব্দগুচ্ছকে হৃদয়াঙ্গম করে, আনন্দিত হয়, মাধবী’র প্রতি উদ্বেলিত থাকে, মুগ্ধ হয়, বেশ আগ্রহ নিয়ে উৎসুক থাকে । বাল্যবন্ধু আতিয়ার ‘মাধবী’- তে মুগ্ধ বলে প্রেরণা যোগালো ।  একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, যিনি নিউইয়র্কে থাকেন, মাধবী’র গুনমুগ্ধ ভক্ত বলে উচ্ছসিত ভাবে প্রকাশ করলেন । এ সবই তোমার জন্য উৎসর্গকৃত !
মাধবী,
গতকাল ১৭ অক্টোবর মাঝরাতে নম্বরবিহীন একটি নম্বর থেকে ফোনে কোন ভূমিকা বা ভান ভনিতা না করে সরাসরি বললো, “ আমি আপনার ‘মাধবীর’ একজন পাঠক। আজ - ‘প্রাক্তনকে ক্ষমা করে দেওয়ার দিন’, আপনি কি জানেন ?” এরপরই সে বলে গেলো, ‘ আজকের দিনের স্মরণে আপনি আপনার ‘প্রাক্তন’ মাধবীকে ক্ষমা করে দেন, ভুলে যান!” আমি তাঁর নাম পরিচয় জানতে চাইলাম, সে বললো না ! আমি তাকে বললাম, আজকের দিনতো প্রাক্তনদের জন্য, মাধবীতো আমার প্রাক্তন নয়, সে আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, আমার প্রগাঢ় অনুভূতি আর অস্তিত্বের অংশ, সে আমার অনুভবের দীর্ঘশ্বাস । আমি বললাম, মাধবী আমার  গহীন অরণ্যের মায়াবী হরিণ, সে আমার বুকের অতল অতলের গভীরতায় বাস করা ঝিনুকের দহন থেকে জন্ম নেওয়া ‘মুক্ত’ সম সম্পদ । এটা শুনার সাথে সাথে সে ফোনটা কেটে দিলো । মনে হলো তোমাকে ভালোবাসি, তোমাতে প্রণত হই এটা সে চায়নি । ‘প্রাক্তন’কে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ ছিলো তার এক ধরনের হিপোক্রেসি, ঠিক তোমার মত। ফোন কাটার পর গভীরভাবে অন্য প্রান্তের কথাগুলো নিয়ে ভাবছিলাম, পাশে ইউটিউবে হেমন্তের কন্ঠে একটি গানের নিচের ক’টি কলি বেশ মনে ধরলোঃ 
    তুমি রাতের সে নীরবতা দেখেছো কি ? 
          শুনেছো কি রাতের সে কান্না ?
      নিবিড় আঁধার নেমে আসে ছায়াঘন 
      কালরাত, কলরব কোলাহল  থেমে 
        যায়, নিশীথ প্রহরী জাগে, তুমি 
              দেখেছো কি ? 
     দেখেছো কি মানুষের অশ্রু শিশিরে 
          শিশিরে ঝরে ? 
মাধবী,
গানের লিরিক শুনতে শুনতে ভাবলাম, তুমি তো কখনো রাতের নীরবতা,নিবিড় আঁধারের ছায়াঘন কালরাত, কলরবহীন  নিশীথ প্রহরী জাগা, অগনিত মানুষের অশ্রু শিশিরে  শিশিরে ঝরে যাওয়া দেখনি! তুমি বাতাসে বাঁজা মানুষের কিংবা রাতের কান্না শোননি !   দেখলে, শুনলে তোমার হৃদয়েও আমার জন্য বিশ্বাসের স্বর্গ বানাতে । তবুও, তারপরও, তারও পর তুমি আমার কল্পনার  শ্বাসতঃ  উর্বশী, আমার অস্তিত্বের শিকড়ে প্রোথিত লখনৌর বাগানের রক্তরাঙা লাল গোলাপের বৃক্ষ, তুমি আমার ভাবনার উর্মিমালা ! কিন্ত বাস্তবে তুমি আমার না অতীত, না বর্তমান, না ভবিষ্যত ! তুমি তোমার জগতে অন্য কারও জীবনে বৃহন্নলার মত সদা বহমান। তাহলে কিভাবে বলি তুমি আমার ‘প্রাক্তন’ ? তোমার ঐ ভন্ড-ভক্ত পাঠক কেন ‘প্রাক্তন’ হিসেবে তোমাকে ক্ষমা করতে বললো ? আর যদি তর্কের খাতিরে তাই হউ ও, তাহলেও কি এই রক্তগঙ্গা নির্জন হৃদপিন্ডের দেয়ালে তোমার জন্য ক্ষমার ক্যালিওগ্রাফি আঁকা যায় মাধবী ? দগদগে ক্ষতের রক্তাক্ত হৃদয় কি কাউকে ক্ষমা করতে পারে ? যেমন ফ্যাসিস্টদের ক্ষমা করতে পারে না খুন গুমের শিকার অগনিত নিকটজনের হৃদয়ের প্রতিবেশীরা ! 
মাধবী, 
নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছিলেন, যে আগুন লাগায়, সে জানে না যার বুকে লাগায় তার কতটুকু পুড়ে বিরাণভূমি হয়, কতটা দহনের নির্জনতা রেখে যায় ! তবে, এটাও জেনো, নির্জনতা কখনো মানুষকে শূণ্য হাতে ফেরায় না।  শরৎচন্দ্র তাঁর শ্রীকান্তে বলেছিলেন, দুঃখ জিনিসটা অভাব নয়, শূন্যও নয়; ভয় ছাড়া যে দুঃখ , তাকে সুখের মতই উপভোগ করা যায় ।আমার আজ ভয় ছাড়া দুঃখ আছে, তাই তোমার দেওয়া দহন বেলায়ও, সুখের সাগরে ভাসি ! তোমাকে ভাবি, তোমাকে ধমণীতে ধারন করি, কল্পনায় তোমার সাথে দেখা হয়, কথা হয়, খুনসুঁটি হয়, শুধু  ভালবাসাবাসি হয় না ! রুদ্রের মত তুমি বোধে আসো, তখন মনে হয়-
              এ কেমন ভ্রান্তি আমার !
       এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো,     
                  বহুদূর……! 
       এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে 
                পারোনি….
     কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি
    পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
     করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
     দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
      চ’লে গেলে মনে হয় তুমি           
     এসেছিলে,চ’লে গেলে মনে হয় তুমি  
            সমস্ত ভূবনে আছো।
মাধবী,
তুমি কি জানো, বিরহ যাতনার যে দহন তার চে’ বড় কোন দাহ্য পদার্থ মর্ত্যলোকে নেই, বিশ্বাসহীনতার চেয়ে বড় কোন শোক নেই, কষ্টের চেয়ে কোন অনুভবের স্পর্শ কোনদিন কাউকে ছুঁতে পারে না! সব বিশ্বাসহীনতার ব্যারিকেড ভাঙার জন্য গ্লানিদের ভুলে যেতে চেয়েছি, নিউইয়র্ক-লন্ডনের পথে পথে টীম-প্যাটেলদের খুঁজেছি ! সব ব্যারিকেডেই তুমি তাদের অতন্দ্র প্রহরী !! 
মাধবী,
পুরুষের সৌন্দর্য্যের ভাষা  খুঁজেছো কখনো ? খুঁজবেই বা কেন ? তোমার কাছে তো পুরুষের সৌন্দর্য বলতে অর্থ বিত্তই মূখ্য ! কিন্ত অনেকের কাছে পুরুষের সৌন্দর্য মানে ভীড়ের মধ্যে তাঁর নারীকে আগলে রাখার মর্যাদা, ফুটপাতে চলার পথে নিজে ডানদিকে থেকে তাকে বামদিকে রেখে নিরাপত্তা দেওয়া, জানালার পাশে বসতে দিয়ে তার ভালোলাগাকে সন্মান দেখানো ! সব পুরুষ তোমার পুরুষদের মত অর্থ বিত্ত বৈভবের চাদরে ঢাকা চকলেট বক্স বয়ে এনে ভোরের পারিজাত পাখি হতে চায় না, সবাই ভোগবাদী পুরুষ নয়, কেউ কেউ মাধবীকে বুকের গভীরের দীর্ঘশ্বাসের টিউনিং করে রাখার পৌরুষত্বও দেখায়, এটাই তাঁদের সৌন্দর্য!
মাধবী, 
কবি রুদ্র গোস্বামীর মত তোমার শূণ্যতার অনুভবে কানাডার নায়াগ্রা ফলস কিংবা  মিসিসাগার চাঁদকে বলি, 
     যদি সে না’ও আসে তুমি এসো চাঁদ
        জানালায় রেখেছি বিষাদ
    দেখে যেয়ো কতো সুখে আছি।
       তুমিও তো সেই তার মতোই 
            পরিযায়ী পাখি !
                  শুভ  রাত্রি

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2