avertisements 2

মাধবী-৪২

মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ জুন,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৯ এএম, ২৮ এপ্রিল,রবিবার,২০২৪

Text

মাধবী,
এখন আর তোমার জন্য মন পুড়ে না, কষ্ট হয় না ! গতকাল তোমার এক শুভাকাংখী, যে তোমাকে লিখতে প্রেরণা যোগায়, মাধবী পড়ে, মাধবী শুনে , যাকে অনায়াসে আমি আমার আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা বর্গা দিতে পারি, সে এক ঘন্টা সময় চেয়েছে আমার কাছে ! বড্ড ভয় হচ্ছে মাধবী, সে শুধু আমার বিশ্বাস, আস্থা আর ভরসার জায়গায় হয়ে উঠেনি, সে আমার প্রচন্ড ভয়ের এক অভয়ারণ্যও বটে, সে আমার শ্রদ্ধাবনতঃ ঠিকানাও হয়ে উঠেছে, বড্ড আতংকে আছি ! ভাবছি আমার জন্য কি শাস্তি অপেক্ষা করছে ॥ 
মাধবী, প্রেম দুর্বোধ্য, নারী দুর্বোধ্য
এবং তুমিও তোমার
প্রেমের মতোই দুর্বোধ্য ছিলে আমার জীবনে ! এখান তুমি শুধুই ধূসর অতীত ! বিশ্বাসহীনতার রোল মডেল হয়ে আমার স্মৃতিতে আবছা আলো আঁধারের ছায়ায় ঢেকে গ্যাছো মাধু , বিশ্বাসহীনতার যন্ত্রনায় আমাকে নিত্যদিন তোমার কথা মনে করায়, সুখের স্মৃতিরা নয় !
মাধবী, তুমি কি কখনো জেনেছো যে ১৬ জুন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের কালো দিন ? ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন সরকারের অনুগত ৪টি পত্রিকা ছাড়া দেশের সবকটি পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিলো । সেই সময় প্রকাশনার অনুমোদন থাকা চারটি পত্রিকা হলো-দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস ও দৈনিক বাংলা। প্রথম পর্যায়ে তৎকালীন সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভারের ডিক্লারেশন বহাল রেখে সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে। পরে দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমসকে নতুনভাবে ডিক্লারেশন দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট চারটি পত্রিকার প্রকাশনা সাময়িকভাবে অব্যাহত রাখা হয়।আজ সব কিছু উন্মুক্ত, ডিক্লারেশন বাতিল নেই, তারপরও  কন্ঠ রুদ্ধ, কলম শৃংখলিত, প্রতিবাদের ভাষা ক্ষীণ ! সরকার স্মার্ট আছে, প্রকাশনা বাতিল না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সামনে রেখেছে, বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রনের প্রশাসনিক স্কীম তৈরী রেখেছে, দুদক এবং কর আইনের প্রায়োগিক দিক কিভাবে খাটানো যায় তার উদাহরণ সামনে এনেছে! এ সবের ভয়ে স্বাধীন সংবাদপত্র পরাধীনতার শৃংখলে শৃংখলিত ! প্রশ্ন চলে আসছে, তাহলে কি ‘৭৫ এর পরিবেশই ভালো ছিলো ? 
মাধবী, 
তোমাকে অনেকবার বলেছি, জীবনের সবচেয়ে পছন্দের জিনিসগুলো নিষিদ্ধ হয় ! নিষিদ্ধ সবকিছুতেই আকর্ষণ বেশী ! এই যেমন গরুর মাংস নিষিদ্ধ, কিন্ত অনেক আকর্ষন তাতে ! তুমি আমার কাছে আজ নিষিদ্ধ পংতিমালা, বিশ্বাসহীনতার মোনালিসা হলেও এখনো তোমার আকর্ষন অনুভব করি !  নিষিদ্ধ  মাধবীই আমার আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ঘুরছে ! 
মাধু, নান্দনিক বেদনা বোঝ ? আমার যাপিত জীবনে তুমি ছিলে নান্দনিক বেদনা ! ছিলে কেন বলছি, এখনো তো তুমি আমার নান্দনিক বেদনাইতো ! তোমার দিক থেকে চোখ ফেরালেই যে বেদনা অনুভূত হয় সেটাই নান্দনিক বেদনা ! নান্দনিক  দুঃখ দেওয়া মানুষের অভাব ! তুমি দিতে পেরেছো, তুমি আমার লেখার অনুকাব্য তাই ! সুখ মানুষকে সৃষ্টিশীল করেনা মাধবী, দুঃখ প্রেরণা দেয় ! তোমার সাথে সুখের দিন গুলোতে তাই কিছু লেখা হয়নি ।  
মাধবী, হুমায়ুন ফরিদীর রেফারেন্সে সোস্যাল মিডিয়ায় একটি স্বগোতোক্তি পড়েছিলাম । আজ মনে হলো তোমার সাথে ঐ চরিত্রের অনেক মিল ছিলো ! তাই তোমার স্মৃতি রোমন্থনের জন্য তুলে ধরলাম- 
   “তুমি বলেছিলে রাতে তোমার ঘুম হয় না,
         আমি বুঝেছিলাম সময় চাইছো; 
তুমি বলেছিলে "আকাশে কী মেঘ             করেছে দেখো?",
আমি বুঝেছিলাম তোমার মন খারাপ। 
তুমি বলেছিলে "চুলে জট বেধেছে";
আমি বুঝেছিলাম তুমি স্পর্শ চাইছো। 
তুমি বলেছিলে আজ বিকেলে তুমি বারান্দায় থাকবে;
আমি বুঝেছিলাম সাক্ষাত চাও। 
তুমি বলেছিলে,অন্ধকারে আমার বড্ড ভয়;
আমি বুঝেছিলাম তোমার আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে; 
তুমি বলেছিলে সমুদ্রে যাবে;
আমি বুঝেছিলাম পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতে চাইছো। 
তুমি বলেছিলে নীল প্রিয় রঙ,
আমি বুঝেছিলাম তোমার কষ্ট হচ্ছে; 
তুমি বলেছিলে ঠোঁট ফেটেছে, 
আমি বুঝেছিলাম চুমু খেতে চাইছো; 
তুমি বলেছিলে অংক ভালো লাগেনা,
আমি বুঝেছিলাম তুমি কবিতা ভালোবাসো; 
তুমি বলেছিলে " আজ তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে হবে", 
তুমি বলেছিলে,এই হুটহাট দেখা করা,অসময়ে ফোন করা আর তোমার ভালোলাগছেনা;
আমি বুঝে গিয়েছিলাম,বিচ্ছেদ চাইছো। 
তারপর অলিখিত সাক্ষরে তুমি যখন ইনভিজিবল কোর্টে আমার বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দিলে;
আমি বুঝেছিলাম তুমি মুক্তি চাও। 
এরপর সব বুঝে যখন আমি দার্শনিক,
সব মিটিয়ে তুমি যখন অন্য কারও শো-পিস, 
একদিন আমাদের দেখা হলো তখন; 
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে,"কেমন আছো?"
আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ভালো নেই !”

লেখক: 
আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2