শুধু মাধবীর জন্য - ৬
মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১০:৫১ এএম, ১৫ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৩৬ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
প্রিয়,
গত কয়েকদিন অখিল বন্ধু ঘোষ এর-
‘ তোমার ভূবনে ফুলের মেলা , আমি কাঁদি সাহারায় - ওগো কমলিকা বুঝিলে না আমি কত অসহায় ‘ -
গানটি অবিরাম শুনে চলেছি । দেশের চলমান সংকট, তোমার অস্তিত্বহীন অনুপস্থিতি আর একাকিত্বের নীল বেদনায় মনটা ভীষন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে !! কোর্ট থেকে বের হয়ে হঠাৎ মনে হলো মানুষের একাকীত্ব নিয়ে কিছু একটা লিখি । কি লিখবো ? কিছুতেই মন বসছে না ! অস্থির সময়, নষ্ট রাজনীতি, ঘুনে ধরা সমাজ, নৈতিকতার অধ:পতন, ব্যাক্তি স্বাধীনতা এবং ব্যাক্তির স্বকীয়তা আজ শোষকের নিষ্ঠুর ক্ষমতার খেলায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্ত । ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আজ গনতন্ত্রহীনতার সীমানা পেরিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বা নৈরাজ্যবাদী দেশের তকমায় লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত আমার প্রিয় স্বদেশ আজ কলংকিত ! সংবিধান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিত্যদিন উপেক্ষিত-পদদলিত !! চারিদিকে মানুষের দীর্ঘশ্বাস, নানাবিধ নির্যাতন- নীপিড়ন দেখে বড় অসহায় লাগছে, একা একা লাগছে , নিজেকে বড় অপ্রয়োজনীয় -পাংতেও লাগছে । মনে হচ্ছে আমার মত তুমিও একা, সবাই একা, ডারউইনের Theory of Individualism কিংবা Survival for the fittest এর কাছে আমরা পরাভূত !
মাধবী আমার, তুমি নেই, তোমার প্রগাঢ় অনুভূতির উপস্থিতিও আমাকে প্রতিবাদের সাহস যোগাতে ব্যর্থ হচ্ছে ...! এই পৃথিবীতে নিজের প্রয়োজনীয়তা আর নেই বলে মনে হচ্ছে , বেঁচে থাকার সুখানুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে !
তুমিতো জানো মাধবী, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নে চোরাবালি সময়ের সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে আজ বিপন্ন একটি মেধাবী প্রজন্ম , যাদের পূর্বপূরুষেরা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিলো, প্রতিবাদের মিছিলে শোষকের গদি তছনছ করেছিলো । এই প্রজন্মের ছাত্র সমাজ তাদের উত্তর পুরুষের ভীরু কাপুরুষের উপমা হোক তা আমি চাই না। আমার আকাংখা আর একটি সংগ্রাম হোক, একটি Just Society’র সংগ্রাম যা মনে প্রশান্তি দেবে, তোমার জন্য আমার ভালোবাসা উপচে পড়ার আনন্দ দিবে , আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাবে !
জানো মাধবী, এই লেখা চলাকালীন শফি ভাইয়ের Facebook wall এ কবি আবুল হোসেনের একটি কবিতা দেখলাম । এই লেখার সাথে অনেকটায় প্রাসংগিক বলে মনে হলো , তাই তোমার জন্য এখানে দিয়ে দিলাম .........!
“ আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে কী কষ্ট লাগে, কষ্ট লাগে
তুমি আমার জামার বোতাম অমন কেন যত্ন কোরে
লাগিয়ে দিতে ?
অমন কেন শরীর থেকে আস্তে আমার
ক্লান্তিগুলো উঠিয়ে নিতে ?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে ?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতোন তুমি উড়িয়ে দিতে ?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে ?
রেখে দিতে ?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা ...
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি, কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝলে যুথী,
হাসি খুশী উড়নচন্ডী মানুষ আমার তাইতো এখন
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু ?
আমি অনেক কষ্টে আছি কষ্টে আছি কষ্টে আছি
আমি অনেক -- আবুল হাসান”
ভালো থেকো সারাবেলা, সারাক্ষণ !!
লেখকঃ,
আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী
ঢাকা - ১৪.১০.২০২০ !