avertisements 2

করোনা আতঙ্কে প্রকাশকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪৩ পিএম, ২ মার্চ,শনিবার,২০২৪

Text

বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা ফেব্রম্নয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের জন্য একাডেমি এবারই প্রথম স্টলের ভাড়া কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দিয়েছিল। তবে বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্তের হার বাড়ায় সরকার নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করায় মেলার সফলতা নিয়ে প্রকাশকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। প্রকাশকদের অনেকেই এবার নতুন বই প্রকাশের জন্য বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলেও জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই নতুন বই প্রকাশে আগ্রহ হরাচ্ছেন। রোববার বাংলা একাডেমি থেকে মেলা বিষয়ে চূড়ান্ত একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রকাশক। একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা না এলে আর সবকিছু ঠিক থাকলে অমর একুশে বইমেলা-২০২২ ফেব্রম্নয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু করতে কাজ করা হয়েছে। বইমেলার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। একাডেমি এক মাস ধরেই এ নিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া এবার অনলাইনেও বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে কাজ চলছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বইমেলায় ক্রেতা ও পাঠকরা আসতে পারেন সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তা। 

২০২২ সালের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য 'বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এবারের বইমেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রকাশক জানান, বাংলা একাডেমি থেকে বইমেলা নিয়ে একটা ডিসিশন দেবেন এই অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কেননা, করোনায় মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলে বা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ যদি হয়ে যায় তবে মেলার সম্পূর্ণ আয়োজনই ব্যর্থ হবে। এ ক্ষেত্রে গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। দূর করতে হবে প্যাভিলিয়ন ও স্টলবিষয়ক কাঠামো নির্মাণের ত্রম্নটি। গত বছর কাঠামো বিন্যাস নিয়ে সব প্রকাশকই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। গত বছর বইমেলায় ৪৬০টি প্রকাশনী সংস্থা অংশগ্রহণ করেছিল। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, অমর একুশে বইমেলা নতুন আঙ্গিকে প্রকাশকবান্ধব করা দরকার। করোনাকালে বইমেলা যদি হয়, তবে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় বইপ্রেমীদের আসতে দেওয়া দরকার। মেলায় খাবারের দোকানগুলো প্রবেশপথের সামনে না রেখে পেছনের দিকে নেয়া উচিত। কেননা অনেকেই মেলায় ঢুকে খাবার দোকানে আড্ডা দিয়ে কিছু খেয়ে বের হয়ে যান। তাদেরকে প্রতিটি স্টলে নেওয়ার দায়িত্ব আয়োজকদের। 

মেলায় প্রবেশপথ বাড়ানো এবং গাড়ি রাখার স্থান নির্দিষ্ট করা দরকার। মৌসুমি প্রকাশকদের বইমেলায় স্থান না দিয়ে শুধুমাত্র সৃজনশীল পেশাদার প্রকাশকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মেলার পরিসর কমালে মেলা আরও জনপ্রিয় হবে বলেও মনে করেন অনেক প্রকাশক। এদিকে শনিবার বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ত্মর দক্ষিণ দিকে পূর্ব ও পশ্চিম দিক পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে মেলার অবকাঠামো নির্মাণ করছে মিস্ত্রিরা। এখন বাঁশ দিয়ে স্টল ও প্যাভিলিয়নের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। কয়েকটি প্রকাশনী সংস্থার কর্মীরাও স্টল নির্মাণে অগ্রিম কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে মিজান পাবলিশার্সের দুজন কর্মীকে কাঠ দিয়ে স্টলের উপরিভাগের মিনার তৈরির কাজ করতে দেখা গেছে। টিএসসি এলাকা থেকে দোয়েলচত্বর পর্যন্ত এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ করতে দেখা গেছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে তাদের কর্মযজ্ঞ চলবে বলেও জানিয়েছেন মেট্রোরেলের একজন কর্মী। এরপর বইমেলার জন্য কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, বইমেলা প্রকাশকদের জন্য মূলত ক্ষতির উৎস। তারপরও আমরা প্রতি বছর মেলা করি মেলা উপলক্ষে বইও প্রকাশ করি। তবে মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারটা প্রকাশনার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বে পড়ে না। আমরা প্রকাশকরা চাই, অমর একুশে বইমেলার যে মূল চরিত্র তা বজায় থাকুক। একুশের চেতনা, সৃজনশীল বই সামনে রেখে পেশাদার প্রকাশকদের মাধ্যমে প্রকাশিত বাংলা ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি এগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। 

করোনায় মেলা নিয়ে কোনও শঙ্কা দেখেন কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'করোনা যদি কন্ট্রোলে না থাকে তবে মেলা না করাটাই সবার জন্য মঙ্গল। গতবারের মতো একুশের মেলা মার্চ বা এপ্রিলে নয়, আমরা চাই মেলা চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী সব অশুভ শক্তি দূর হয়ে ফেব্রম্নয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হোক।' ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, 'গত কয়েক বছরে প্রকাশকদের মধ্যে মেলার কাঠামো বিন্যাস নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হতে দেখা গেছে। ২০২১ সালে আমরা মেলায় যাইনি। তবে এবার মেলা হলে অংশ নেব।' মেলার স্টল বিন্যাস নিয়ে তিনি বলেন, 'গতবার সব প্রকাশকেরই অভিযোগ ছিল, বড় প্রকাশনা ও প্যাভিলিয়নগুলো মাঝখানে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে দূরের ছোট স্টলগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।' তিনি বলেন, পাঠকদের সুবিধার জন্য মেলায় প্রবেশ আরও সহজ করা দরকার। গত দুই বছর করোনার প্রভাবে সৃজনশীল প্রকাশকদের চরম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উলেস্নখ করে এই প্রকাশক বলেন, 'করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পেশাদার সৃজনশীল প্রকাশকরা। প্রকাশকরা করোনাকালীন কোনো প্রণোদনা পাননি। এখন প্রকাশকদের জন্য নতুন বিনিয়োগের পরিবেশও সঙ্কুচিত হয়েছে। তাই সরকারের উচিত পেশাদার প্রকাশকদের পাশে দাঁড়ানো।' বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, অমর একুশের চেতনায় ঋদ্ধ মেলা লেখক ও প্রকাশকবান্ধব করতে সবরকম পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। 

প্রকাশকদের পেশাদার হয়ে ওঠার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, প্রকাশনায় পেশাদারিত্ব না এলে সরকারের হাজার প্রণোদনা দিয়েও প্রকাশনা শিল্পের উন্নতি সম্ভব না। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, বইমেলা প্রতি বছরই নতুন আঙ্গিকে বিন্যস্ত করা হচ্ছে। আগের থেকে বইমেলাকে অনেকটাই আধুনিক করে তোলা হয়েছে। এ বছর বইমেলাকে সবার অংশগ্রহণে আরও গোছানো, পাঠক-প্রকাশকবান্ধব করে সাজানো হবে। তিনি আরও বলেন, 'বইমেলা নিয়ে এখনও বইপ্রেমী মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। তারা সুযোগ পেলেই বাইরে আসছে। সুতরাং বইমেলা শুরু হলে জনসাধারণের প্রাণের স্পন্দন ও পদচারণায় মুখর হবে বইমেলা প্রাঙ্গণ।' তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস অতিমারির পাশাপাশি ওমিক্রনের আক্রমণের কারণে যাতে বইমেলা বন্ধ ঘোষণা না করতে হয় সে জন্য সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে একাডেমি। মেলা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2